Kolkata Doctor Rape and Murder

আন্দোলন থামালে চলবে না: নির্যাতিতার মা

৯০ দিন হয়ে গেলেও সিবিআই আর জি করের খুন ও ধর্ষণের মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা না দেওয়ায় শুক্রবার শিয়ালদহ আদালত সন্দীপ ও অভিজিতের জামিন মঞ্জুর করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২০
Share:

আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ। —ফাইল চিত্র।

আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাওয়ার কারণেই ‘সিবিআই সুযোগ পেয়ে গেল’। তাই মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার ছিনিয়ে আনতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিলেন আর জি করের নির্যাতিতার বাবা-মা। বললেন, ‘‘যত দিন আন্দোলনের চাপ ছিল, সঠিক পথে তদন্ত হচ্ছিল। তখনই সকলকে গ্রেফতার করেছিল। আন্দোলন আগের মতো থাকলে সিবিআই এই কাজ করতে পারত না।’’ তাই, শুক্রবার সিবিআই চার্জশিট পেশ করতে না পারায় সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের জামিনের প্রতিবাদে শনিবার শহরের দুই প্রান্তে ফের প্রতিবাদে নামলেন জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসক থেকে নাগরিক সমাজ। সল্টলেক ও রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, দু’জায়গার জমায়েতেই হাজির হয়ে নির্যাতিতার বাবা-মাও জানিয়ে দিলেন, সব আন্দোলনেই তাঁরা থাকবেন।

Advertisement

৯০ দিন হয়ে গেলেও সিবিআই আর জি করের খুন ও ধর্ষণের মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা না দেওয়ায় শুক্রবার শিয়ালদহ আদালত সন্দীপ ও অভিজিতের জামিন মঞ্জুর করে। এর পরেই ফের রাস্তায় নেমে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট থেকে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। সেই মতো এ দিন দুপুরে করুণাময়ী থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয় জুনিয়র চিকিৎসক ফ্রন্ট-সহ মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম এবং নার্সেস ইউনিটির সদস্যেরা। অন্য দিকে, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল অভয়া মঞ্চ। সিবিআই দফতর অভিযান ও তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলার কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটলেও, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশের শেষে কুশপুতুল দাহ করাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কেন কুশপুতুলের আগুনে জল ঢালা হচ্ছে, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে অভয়া মঞ্চের সদস্যদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাঁদের দু’-এক জনকে মেরেছে পুলিশ। এক জনের চশমা ভেঙে গিয়েছে।

অন্য দিকে, সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে এসে জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, ‘উত্তর সন্তোষজনক নয়।’ ফ্রন্টের তরফে দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘তদন্তকারী আধিকারিক জানালেন, জামিন পেয়েছে মানে অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে তা নয়। তদন্ত পুরো মাত্রায় বজায় রয়েছে। তাই কারও হতাশ হওয়ার বিষয় নেই।’’ দেবাশিস আরও বলেন, ‘‘আধিকারিক দাবি করেছেন, ৯০ দিনের মধ্যে তাঁরা চার্জশিট দিতে পারেননি তেমনটা নয়। তাঁরা দেননি। কারণ আরও কিছু জোরালো তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তবেই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেবেন।’’ এ দিন দেবাশিস, কিঞ্জল নন্দ-সহ আরও কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস, নার্সেস ইউনিটির পক্ষে শুচিস্মিতা মজুমদার মিলিয়ে মোট আট জনের প্রতিনিধি দল সিজিও কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢুকেছিলেন।

Advertisement

সজল বলেন, “কত দিনের মধ্যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে পারবেন, তা ওই আধিকারিক নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। চূড়ান্ত নেতিবাচক ভূমিকার বিরুদ্ধে চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজকে আরও জোরদার ভাবে রাস্তায় থাকতে হবে।” বিপ্লব বলেন, “রাজ্য প্রশাসন ও সিবিআইয়ের মধ্যে যে গোপন বোঝাপড়া, তা রুখতে ও ন্যায়বিচার ছিনিয়ে আনতে আন্দোলনই একমাত্র পথ।” অন্য দিকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সভামঞ্চ থেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে নির্যাতিতার বাবা দাবি করেন, মানুষ আগের মতো আবার পথে নামলে তাঁর মেয়ের বিচার পেতে অসুবিধে হবে না। নির্যাতিতার মা বলেন, “আন্দোলন থামালে চলবে না। দেশবাসীর কাছে আমি অনুরোধ করব, আপনারা আবার রাস্তায় নামুন, আমরাও সঙ্গে থাকব। সিবিআই আবার তার কাজ করবে।” এ দিন দুই প্রান্তের প্রতিবাদ বিক্ষোভ থেকেই অভিযোগ ওঠে, রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই পক্ষের আঁতাঁত শুরু হয়েছে। যা লজ্জাজনক ও হতাশাজনক।

এখনই সিবিআইয়ের উপরে পুরো ভরসা হারাতে চান না নির্যাতিতার বাবা-মা। করুণাময়ীর জমায়েতে তরুণী চিকিৎসকের বাবা বলেন, “আদালতের কাছে আবেদন করেছিলাম বিশ্বাসযোগ্য ও উপযুক্ত কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতে। আদালত সিবিআইকে তদন্তভার দেয়। তাই আপাতত হতাশ হলেও সিবিআইয়ের উপরেই এখনও ভরসা করতে হবে।” অগস্ট থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে যে সব স্লোগানে রাজপথ ভরে থাকত, এ দিনও শহরের দুই প্রান্তের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সেগুলি ফের শোনা গেল। স্লোগান উঠল, ‘বিচার তুমি দেবে না, নিস্তার পাবে না।’ অভয়া মঞ্চের সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের হাতে থার্মোকলের তৈরি হাওয়াই চটিও দেখা গিয়েছে।

ধর্মতলার বিক্ষোভমঞ্চে চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিবিআই তিন মাস পরেও কেন চার্জশিট দিতে পারল না সেটাই আমাদের অবাক করেছে। হতে পারে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইন্ডিয়া জোটে ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছেন। হতে পারে তারই পুরস্কার এই চার্জশিট দিতে না পারা।” অভয়া মঞ্চের অভিযোগ, প্রথম থেকেই যে কোনও উপায়ে পুলিশ এ দিনের কর্মসূচি আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। অভয়া মঞ্চের আহ্বায়ক চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী বলেন, “পুলিশ কুশপুতুল পোড়াতে দিতে চায়নি। কিন্তু আমরা পুড়িয়েছি। গোটা রাজ্য তো জ্বলছে।” তাঁদের অভিযোগ, কুশপুতুলে জল দিতে সাধারণ পোশাকে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতেই ওই চেষ্টা। তাতে একটা উত্তেজনা তৈরি হলেও পরে তা ঠেকানো গিয়েছে।

দুর্নীতি মামলায় সন্দীপের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার জন্য রাজ্যকে সোমবারের মধ্যে সম্মতি দেওয়ার সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় অভয় মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। তমোনাশ বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট বলার পরেও রাজ্য চার্জশিটের সম্মতি দেয়নি। দু’দিন সময় দিলাম। রাজ্য সরকার নিজের কাজ না করলে সোমবার আইনের সাহায্য নিয়ে ধর্মতলা দখল করব।”

ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বারবার রাস্তায় নামতে হবে বলে তাঁরা ভাবেননি বলেও এ দিন আক্ষেপ প্রকাশ করেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁদের কথায়, “খুব দুঃখ পেয়েছি। কিন্তু তাও দেশ ও রাজ্যবাসীকে বলব, হতাশ হলে চলবে না। আন্দোলনই বিচার ছিনিয়ে আনার একমাত্র পথ।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement