ঠাকুর গড়ার তদারকি করছেন কোহিনূর বিবি। নিজস্ব চিত্র
অন্য গ্রামে দুর্গাপুজো দেখে মন ভার হয়ে থাকত ওঁদের। ফি বছর পুজো দেখতে যেতে হত দূরের গ্রামে। সে দুঃখ অবশ্য ঘুচেছে বীরভূমের বিলাসপুর গ্রামের মালপাড়ার বাসিন্দাদের। সৌজন্যে পাড়ার কয়েক জন উদ্যমী যুবক এবং কোহিনূর বিবি। এই মহিলার উদ্যোগ ও অনুদানেই তিন বছরে পা রাখল মুরারই ২ ব্লকের প্রত্যন্ত এই এলাকার দুর্গাপুজো।
গ্রামে তাঁর পরিচয় ‘কোহিনূর দিদি’ নামেই। প্রথম বছর থেকে পুজো কমিটির পাশে তিনি। পুজোর সাজ থেকে প্যান্ডেল গড়া— সবের তদারকি লিটন মাল, নন্দ মাল, লোটন মালদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করছেন কোহিনূর। তাঁর উৎসাহ দেখার মতো, বলছেন গ্রামের লোকজন। এ বছরের পুজোর সমস্ত জোগানও দিচ্ছেন মুরারই ২ ব্লক ভূম ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী কোহিনূর। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের সকলে পুজো ও ইদে এক সঙ্গে থেকে খুব আনন্দ করি। পাড়ার মহিলাদের ও ছোটদের অন্য গ্রামে পুজো দিতে যেতে হত। এখন গ্রামে পুজো হওয়ায় সবাই খুব আনন্দে কাটান। বিশেষ করে ছোটদের আনন্দ দেখে মন ভরে যায়।’’
লিটন, নন্দরা বলেন, ‘‘প্রথম বছর ভয় পেয়েছিলাম পুজোর এত টাকা কোথা থেকে জোগাড় করব। পাড়ার অধিকাংশ মানুষজন দিন আনে দিন খায়। ভাবছিলাম পুজো করব না। কিন্তু কোহিনূর দিদি পাশে থাকায় পুজোটা শুরু করতে পেরেছি।’’ তাঁরা জানান, আর্থিক সাহায্য ছাড়াও পুজোর প্যান্ডেল, প্রতিমা তৈরি, লাইট লাগানো সব কিছুই নিজে দেখছেন কোহিনূর।
মালপড়ার বাসিন্দা মালতি মাল ও সবিতা মালরা বলেন, ‘‘গ্রামের মেয়ে কোহিনূর না থাকলে বোধহয় এ পুজো হত না। সব সময় আমাদের জিজ্ঞাসা করছেন, পুজোর কিছু বাদ পড়ল না তো! পুরোহিতের দেওয়া ফর্দ বারবার মিলিয়ে দেখতে বলছেন।’’ কোহিনূর নিজে বলছেন, ‘‘এই দুর্গাপুজো ঘিরে পাড়ার লোকের আবেগ ও উৎসাহের জন্য আমি সব সময় ওদের পাশে আছি, থাকবও।’’