রেললাইন এবং জলের পাইপলাইন অক্ষত রেখেই সেতু নির্মাণের চাপ নিতে হবে।
উপযুক্ত নির্মাণ সংস্থা বাছাই করে তাদের হাতেই টালা সেতুর নকশা তৈরি থেকে শুরু করে নির্মাণকাজের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। মাঝেরহাট সেতুতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোকিয়োরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন বা ইপিসি পদ্ধতি অনুসরণ করে টালা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ চলছে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী সেতুর কারিগরি নকশা তৈরি থেকে নির্মাণের উপকরণ সংগ্রহ ছাড়াও সেতু তৈরির দায়দায়িত্ব নির্মাণ সংস্থার উপরেই বর্তাবে। তবে সেতুর নকশা তৈরির পরে তা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে রাজ্য ও রেল।
টালা সেতু তৈরি হয়েছিল ১৯৬২ সালে। দ্বিতীয় বার ওই সেতু তৈরি করতে গিয়ে রাজ্যের পূর্ত দফতরকে অন্তত ১০০ বছর আয়ুর কথা মাথায় রেখে এগোতে হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির চাপের কথাও রাখতে হচ্ছে হিসেবের মধ্যে। বর্তমান টালা সেতু কমবেশি ৮৫০ মিটার লম্বা এবং ১৮.৪ মিটার চওড়া। ভবিষ্যতের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার এ বার আরও প্রশস্ত সেতু তৈরি করতে চায়। পোশাকি ভাষায় যাকে ‘লং স্প্যান ব্রিজ’ বলছেন পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন: ক্যানসার-তথ্যে সমান অনাস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যের!
এই ধরনের সেতু তৈরি করতে হয় অনেকটা এলাকা জুড়ে। সেই জন্য প্রচুর ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতে হবে নির্মাণস্থলে। পাশাপাশি সেতুর নীচে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকা রেললাইন এড়িয়ে একাধিক স্তম্ভ নির্মাণের উপযোগী জায়গা খুঁজে বার করতে হবে। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি কঠিন হলেও এলাকার গুরুত্ব, যান চলাচলের পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের স্থায়িত্বের কথা মাথায় রেখে লং স্প্যান ব্রিজ তৈরি করা জরুরি। কারণ, এই ধরনের সেতু দীর্ঘদিন ধরে অনেক বেশি ভার বহনে সক্ষম।’’
এরই সঙ্গে আরও একটি সমস্যা ভাবাচ্ছে পূর্ত দফতরকে। টালা সেতু রয়েছে কলকাতা পুরসভার জলের পাইপলাইন রয়েছে। সেই পাইপলাইন সরানোর বিকল্প জায়গা কার্যত নেই। ফলে রেললাইন এবং জলের পাইপলাইন অক্ষত রেখেই সেতু নির্মাণের চাপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন:বর্ধমান কাণ্ডে মৃত্যু আহতের
এখনকার সেতুটি তৈরি হওয়ার পরেও আরও তার সঙ্গে বেশ কিছু পরিকাঠামো যুক্ত হয়েছে। ওই সব পরিষেবার কেব্ল রয়েছে সেতু এলাকায়। ‘‘পুরনো সেতু ভাঙা এবং নতুন সেতু তৈরির মধ্যবর্তী সময়ে যাবতীয় পরিষেবা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে,’’ বলছেন এক প্রশাসনিক কর্তা। ফলে সব দিক মাথায় রেখে সেতু নির্মাণকাজ করতে পারবে, এমন দক্ষ সংস্থার হাতেই এই দায়িত্ব দিতে চায় রাজ্য সরকার। ইপিসি পদ্ধতি গুরুত্ব পাচ্ছে সেই জন্যই।
রেলের আধিকারিকদের দাবি, রাজ্য সরকার কোনও সংস্থা বাছাই করে সেতুর নকশা তৈরির ব্যবস্থা করলে তাঁরা তা খতিয়ে দেখে অনুমোদন দিতে পারেন। তবে নকশায় রেলের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। নকশা অনুমোদন নিয়ে জটিলতা কাটাতে রাজ্য ও রেলের আধিকারিকদের নিয়ে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে। সমন্বয়ের অভাবে মাঝেরহাট সেতুর নকশা অনুমোদনে অনেক দেরি হয়েছিল। রেলকর্তাদের আশা, এ ক্ষেত্রে সেটা হবে না।