খাগড়াগড় কাণ্ডে ছয় থেকে দশ বছর জেল, জরিমানা

আদালত জানিয়েছে, বেআইনি কার্যকলাপ, ষড়যন্ত্র, বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুতের বিভিন্ন ধারায় ওই ১৯ জনকে শাস্তি দেওয়া হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৯
Share:

ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে খাগড়াগড় মামলার দুই মহিলা আসামি। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চেয়ে বিচার পর্ব শেষ হওয়ার আগেই দোষ কবুল করেছিলেন খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ধৃত ১৯ জন। সেটা বিবেচনায় রেখে কলকাতার এনআইএ বা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার বিশেষ আদালত শুক্রবার তাঁদের ন্যূনতম ছ’বছর থেকে সর্বাধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড দিল। দণ্ডিতদের প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল। ‘‘সবাই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুন। সুস্থ নাগরিক হয়ে জীবন যাপন করুন,’’ রায় দান শেষে দণ্ডিতদের উদ্দেশে বলেন বিচারক।

Advertisement

আদালত জানিয়েছে, বেআইনি কার্যকলাপ, ষড়যন্ত্র, বেআইনি অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুতের বিভিন্ন ধারায় ওই ১৯ জনকে শাস্তি দেওয়া হল। গ্রেফতারের পর থেকে ওই আসামিরা জেলেই আছেন। কারাদণ্ডের মোট মেয়াদ থেকে ইতিমধ্যে জেলে কাটানোর সময়টা বাদ যাবে। দণ্ডিতদের মধ্যে আছেন দুই মহিলা, এক ছাত্র এবং বাংলাদেশের কয়েক জন নাগরিক। কারাবাসের মেয়াদ শেষ হলে এবং দেশের অন্য কোনও আদালতে ওই বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে মামলা না-থাকলে তাঁদের দেশে ফেরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলের কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

দোষী ছাত্র সইকুল ইসলাম খানের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘লেখাপড়া করিস, সে-কথা ভেবেই ছ’বছর জেলে থাকার নির্দেশ দিলাম।’’ গুলসোনা বিবি ও আলিমা বিবি নামে দোষী দুই মহিলার উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘আপনাদের শিশুসন্তান রয়েছে। এর আগে আপনাদের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনও অভিযোগ নেই। সেই জন্য আপনাদেরও শাস্তি ছ’বছরের জেল এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা।’’

Advertisement

বিচারক দণ্ডিতদের প্রত্যেককেই জানান, তাঁর রায়ের বিরুদ্ধে সকলেই উচ্চ আদালতে (কলকাতা হাইকোর্টে) আপিল করতে পারেন। সেই মামলায় রাজ্য সরকার সকলকেই আইনি সাহায্য ও পরিষেবা দেবে। রায় ঘোষণার পরে সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবীরা জানান, বিশেষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টে আপিল মামলা করবেন।

২০১৪-র ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে আব্দুল হাকিম নামে এক ব্যক্তির বাড়ির দোতলায় বিস্ফোরণ হয়। মারা যান দু’জন। গুরুতর আহত এক জন। প্রথমে বর্ধমান জেলা পুলিশ, পরে সিআইডি তদন্ত করে। শেষে তদন্তের ভার নেয় এনআইএ।

তদন্তে জানা যায়, বোরখা সেলাইয়ের আড়ালে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র সদস্যেরা ওই বাড়ির দোতলা ভাড়া নিয়ে বোমা তৈরি করত। এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ জানান, খাগড়াগড়ের ঘটনার পরেই জেএমবি-র ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। চার্জশিট পেশ করে তদন্তকারীরা জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করাই ছিল জেএমবি সদস্যদের উদ্দেশ্য। জেএমবি-র চাঁইয়েরা এ রাজ্যের বাছাই করা কয়েকটি মাদ্রাসায় অস্ত্রচালনা এবং বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণ দিত।

খাগড়াগড় মামলায় এ-পর্যন্ত পাঁচটি চার্জশিট পেশ করেছেন এনআইএ-র তদন্তকারীরা। ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৯ জন দোষ কবুল করেন। ১১ জনের বিচার চলছে। তিন অভিযুক্ত পলাতক।

এ দিন বেলা ২টো নাগাদ সাজা ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিচারক জানিয়ে দেন, ‘ইন ক্যামেরা’ বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে দণ্ড ঘোষণার কাজ চলবে। মামলার সঙ্গে সম্পর্কহীন কেউ তখন আদালত কক্ষে থাকবেন না। ঘণ্টাখানেক সেই প্রক্রিয়া চলে। বেলা ৩টে নাগাদ এজলাস থেকে ওঠার আগে বিচারক আইনজীবীদের জানিয়ে দেন, তিনি শাস্তি ঘোষণা করবেন বিকেল ৪টে নাগাদ।

আসামিদের আইনজীবী ফজলে আহমেদ ও মহম্মদ আবু সেলিম জানান, রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারক ১৯ জনের সঙ্গেই আলাদা ভাবে কথা বলেন। দোষী সাব্যস্ত করার দিনেই বিচারক বলেছিলেন, শাস্তির মেয়াদ সর্বাধিক যাবজ্জীবন কারাবাস হতে পারে। এ দিন দোষীদের কেউ জানান, তাঁর বাড়িতে স্ত্রী ও শিশু সন্তানেরা রয়েছেন। তাঁদের দেখাশোনার কেউ নেই। কেউ জানান, বৃদ্ধ বাবা-মা তাঁর আয়ের উপরেই নির্ভরশীল। ন্যূনতম সাজার আবেদন জানান কেউ কেউ। এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামলবাবু আদালতে জানান, তদন্তকারীরা সর্বোচ্চ শাস্তিই চান।

দণ্ডিতদের কোনও আত্মীয়স্বজনকে এ দিন আদালত চত্বরে দেখা যায়নি। অসমের বরপেটায় সইকুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাড়ির লোকজন জানান, তাঁরা খুশি। কারণ, আর বছর দেড়েকের মধ্যেই ছেলে ঘরে ফিরবে। দণ্ডিতদের অন্যতম শাহনুর আলম ছিল অসমে জেএমবি স্লিপার সেলের মাথা। তার স্ত্রী সুজিনা জেএমবি স্লিপার সেলের মহিলা বিভাগের প্রধান বলে অভিযোগ এনে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বরপেটার এসপি রবিন কুমার জানান, সুজিনা জামিন পেয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে নলবাড়িতে বাপের বাড়িতে আছেন। চতলা গ্রামে শাহনুরের পরিবার এবং অন্যান্য পরিবার মুখ খোলেনি। কিছু গ্রামবাসী জানান, ২০১৪ সালে ইদের আগের দিন বাংলাদেশ থেকে ধর্মগুরুকে এনে বিশেষ নমাজের ব্যবস্থা করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল শাহনুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement