Suvendu Adhikari

শুভেন্দুকে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ কল্যাণের, আলোচনার সঙ্গেই কি কঠোর হচ্ছে দল

কল্যাণের ঘনিষ্ঠমহল জানাচ্ছে, দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন ছাড়া শ্রীরামপুরের সাংসদ ওই মন্তব্য করেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৩
Share:

শুভেন্দুকে রাজনৈতিক আক্রমণ করলেন কল্যাণ।

একদিকে যখন দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় আলোচনা প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তখন অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন অপর সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নাম না করে কল্যাণ যে ভাবে শুভেন্দুকে রাজনৈতিক আক্রমণ করেছেন, তাতে ভবিষ্যতে সমঝোতার আশা ক্রমশ কমছে বলেই তৃণমূলের অন্দরে একাধিক নেতার অভিমত। বস্তুত, কল্যাণ শুভেন্দুকে সরাসরি চ্যালেঞ্জই জানিয়েছেন!

Advertisement

কল্যাণের ঘনিষ্ঠমহল জানাচ্ছে, দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন ছাড়া শ্রীরামপুরের সাংসদ ওই মন্তব্য করেননি। যা থেকে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, সমঝোতার দরজা খোলা রেখেও কি শুভেন্দু সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে দল?

শুক্রবার হুগলির বলাগড়ে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে শুভেন্দু নাম না করে কল্যাণকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি, প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত অনিল বসু যখন কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, তখন হুগলি জেলার মানুষ সেটা মেনে নেননি। আজ যদি কোনও বর্তমান জনপ্রতিনিধি আমার বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যক্তগত আক্রমণ করেন, তাহলে আপনারা কি সেটা মেনে নেবেন? আপনারা কি এই কালচার (সংস্কৃতি) সমর্থন করেন?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নেতাজির মতোই কোণঠাসা করার চেষ্টা বাঙালি মমতাকে: ব্রাত্য​

শুভেন্দু-শিবিরের অভিযোগ, গত ১০ নভেম্বর ‘নন্দীগ্রাম দিবস’-এর পর কল্যাণ একটি দলীয় সভায় নাম না করে বলেছিলেন, শুভেন্দুর পরিবারকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামের গাছের তলায় বড় হয়েছিস। চারটে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিস। চারখানা চেয়ারে আছিস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিতে আলু বেচতিস রে! আলু বেচতিস!’’

তার পরে অবশ্য বৃহস্পতিবারই কল্যাণ বলেন, তিনি শিশির অধিকারীকে শ্রদ্ধা করেন। শুভেন্দু তাঁর ছোটভাইয়ের মতো। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে কল্যাণ আবার আক্রমণাত্মক হয়েছেন। কারণ, শুভেন্দু হুগলিতে গিয়ে নাম না করে তাঁকেই কটাক্ষ করেছেন বলে কল্যাণ-শিবিরের অভিযোগ। এবারে অবশ্য কল্যাণের আক্রমণ পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক’।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৩ মিনিটের একটি ভিডিও বার্তায় শুভেন্দুর নাম না করে কল্যাণ সটান বলেন, ‘‘দলের সদস্য থাকব। মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হয়ে থাকব। আবার অন্য রাজনৈাতিক দলের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করব— যে ব্যক্তি এ সমস্ত কাজ করে, তার কথার আমি কী উত্তর দেব!’’ নন্দীগ্রাম দিবসের দিন শুভেন্দুর শরীরীভাষার উল্লেখ করে কল্যাণ বলেন, ‘‘আজ উনি অনেক বড় বড় বক্তৃতা দিচ্ছেন। এর ভাষা, ওর ভাষার কথা বলছেন! সেদিন কাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন? নাম বলেননি? কেন সাহস হয়নি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে?’’

আরও পড়ুন: মেঠো কবাডি থেকে সবুজ গল্ফ কোর্সে, নব্য অবতারে ময়দানে নয়া দিলীপ

কল্যাণের আরও বক্তব্য, মমতার নেতৃত্বে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছিল। সেখানে স্থানীয় নেতারা তাঁর সহযোগী ছিলেন। কারও বেশি ভূমিকা ছিল। কারও কম ভূমিকা ছিল। কিন্তু সমস্ত আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন মমতাই।’’ কল্যাণের কথায়, ‘‘আমি তো কখনো বুক বাজিয়ে বলি না, আমার কী ভূমিকা ছিল! নন্দীগ্রামের ঘটনায় যদি সিবিআই করিয়ে না নিয়ে আসতাম, এসব বড় বড় নেতারা তো সব খাটের তলায় ঢুকে গিয়েছিল! বেরিয়ে আসতে পারত না। সেদিন তো সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়েছিলাম। উনি তো একদিনও সময় দিতে পারেননি!’’

শুভেন্দুকে তমলুকের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্ণণ শেঠের উদাহরণ দিয়ে কল্যাণ বলেছেন, ‘‘উনিও দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদ ছিলেন। নিজের দুষ্কর্মের জন্য তাঁকেও মাটির সঙ্গে মিশে যেতে হয়েছে। অতএব, আত্ম অহঙ্কার ভাল নয়। তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেত্রী মেনে প্রতিটি জায়গায় বলতে হবে। যদি বলে এই দলে থাকবে। এই দলেই থাকবে আগামিদিনে, তবে সমস্তরকমের সাহায্য-সহামুভূতি থাকবে। তা না হলে বিরোধিতা আছে। বিরোধিতা থাকবে। একটি মিটিংয়ে দু-চার হাজার লোক নিয়ে এসে হইহুল্লোড় করা যায়। মানুষ সব দেখছে। মানুষ জবাব দেবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement