জনসংযোগ: প্রচারে দীপা, পাশে মান্নান। কালিয়াগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
এনআরসি নয়, রায়গঞ্জে এমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি না হওয়াকেই নির্বাচনী প্রচারের ‘মুখ’ করলেন দীপা দাশমুন্সি। কালিয়াগঞ্জে বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে বুধবার প্রথম কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে ময়দানে নামলেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ। এমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি না হওয়ায় একযোগে তিনি বিঁধলেন তৃণমূল, বিজেপিকে।
অন্য দিকে, এনআরসির প্রতিবাদ ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এ দিন প্রচার করলেন কংগ্রেস ও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। উল্লেখ্য, ২৫ নভেম্বর কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে কালিয়াগঞ্জের প্রয়াত কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায়ের মেয়ে ধীতশ্রী রায়কে। সিপিএম এই কেন্দ্রে প্রার্থী না দিয়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় কালিয়াগঞ্জ শহরের মহেন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকার নাটমন্দিরের মাঠে ধীতশ্রীর সমর্থনে যৌথ নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। ওই জনসভায় দীপা ছাড়াও ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, দলের তিন বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, ইশা খান চৌধুরী, মোহিত সেনগুপ্ত। বামফ্রন্টের তরফে জনসভায় শামিল হন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আরএসপি নেতা বিশ্বনাথ চৌধুরী।
সভায় দীপা দাবি করেন, ২০০৯ সালে কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার রায়গঞ্জে এমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করে। তাঁর অভিযোগ, ২০১১ সালে তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে ওই হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করেনি। তার পরে ২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর ওই দলের নেতা-মন্ত্রীরা তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই হাসপাতাল কল্যাণীতে সরিয়ে নিয়ে যায়।
দীপা বলেন, ‘‘প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির স্বপ্ন ছিল, রায়গঞ্জে এমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি করা। ওই হাসপাতাল তৈরি হলে উত্তরবঙ্গ-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দারা উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পেতেন। কংগ্রেসকে রুখতে তৃণমূল ও বিজেপি যোগসাজস করে ওই হাসপাতাল তৈরি রুখে দেয়। এর প্রতিবাদে আপনারা নির্বাচনে ধীতশ্রীকে ভোটে জেতান।’’
এ দিন প্রিয়রঞ্জনের দ্বিতীয় প্রয়াণবার্ষিকী ছিল। জনসভার আগে কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা মঞ্চের পাশে তাঁর ছবিতে ফুল ও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
দু’সপ্তাহ আগে ধীতশ্রী নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। কিন্তু কালিয়াগঞ্জে বাড়ি হওয়া সত্বেও এত দিন তাঁর সমর্থনে দীপা প্রচারে না নামায় কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল। এ নিয়ে দীপার বক্তব্য, ‘‘দল আমাকে ওড়িশার দায়িত্ব দিয়েছে। ব্যস্ততার কারণে এত দিন প্রচার করতে কালিয়াগঞ্জে আসতে পারিনি।’’
এ দিনের জনসভায় সুজন বলেন, ‘‘বিজেপি এ রাজ্যে এনআরসি কার্যকরী করে আপনাদের দেশ থেকে তাড়াতে চায়। তৃণমূল এখনও রাজ্যজুড়ে সাধারণ মানুষ ও বিরোধীদের উপর সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। এনআরসি রুখতে ও সন্ত্রাস রুখতে আপনারা বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী ধীতশ্রীকে জয়ী করুন।’’
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ ও রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানির কটাক্ষ, ‘‘নির্বাচন আসলেই দীপাদেবীর এইমসের কথা মনে পড়ে। মানুষ কংগ্রেস ও সিপিএমের ভাঁওতাবাজি ও মিথ্যাচারের রাজনীতি বুঝে গিয়েছেন। উন্নয়নের স্বার্থে এবারের নির্বাচনে কালিয়াগঞ্জের মানুষ তৃণমূলকে জয়ী করবেন।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দামের বক্তব্য, ‘‘কালিয়াগঞ্জের মানুষ কংগ্রেস ও সিপিএমকে অনেক দিন আগেই প্রত্যাখান করেছেন। তাই ওই দুই দলের নেতার কথায় বিজেপি কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না।’’