বিজেপির বৈঠকে বক্তার তালিকায় নাম নেই কৈলাসের। ছবি: পিটিআই
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য বিজেপি-র কার্যকারিণী বৈঠক। তার কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত বক্তার তালিকায় নাম নেই দলের রাজ্য পর্যবেক্ষক তথা অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের। যা খবর, তাতে তিনি সশরীরে তো নয়ই, ভার্চুয়াল মাধ্যমেও বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে অন্ধকারে রাজ্য নেতারা।
রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় জেলা এমনকি, রাজ্যস্তরের অনেক নেতার মধ্যেও কৈলাসকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। অনেকে তা প্রকাশ্যেও এনেছেন। সম্প্রতি কলকাতায় কৈলাসের নামে ‘টিএমসি সেটিং মাস্টার’, ‘গো ব্যাক’ বলে পোস্টার পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারের বৈঠকে যাতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামনে এসে না যায়, তাই তাঁকে ওই বৈঠকে না রাখার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই নিয়েছেন বলে দাবি রাজ্য নেতাদের ওই অংশের। তাঁদের আরও দাবি, মুকুল রায় তৃণমূলে চলে যাওয়াটাও কৈলাসের আড়ালে থাকার সম্ভাবনার অন্যতম কারণ।
তবে বিজেপি-র একটি সূত্রের দাবি, আগে বৈঠকে থাকতে না বলা হলেও শেষ মুহূর্তে কিছুক্ষণের জন্য অনলাইনে বৈঠকে যোগ দিলেও দিতে পারেন কৈলাস। বৈঠকে সর্বশেষ বক্তা বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তিনি দিল্লি থেকে বক্তৃতা করবেন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ। তার আগে মিনিট দশেকের জন্য হলেও বক্তৃতা দিতে পারেন কৈলাস।
বিজেপি-র কার্যকারিণী বৈঠকের যা ধারা, তাতে শুরুতেই বক্তৃতা করেন রাজ্য সভাপতি। কৈলাস বিজেপির রাজ্য পর্যবেক্ষক তথা অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ছবি: পিটিআই
বিজেপি-র কার্যকারিণী বৈঠকের যা ধারা, তাতে শুরুতেই বক্তৃতা করেন রাজ্য সভাপতি। সেই ধারা বজায় রাখতে মঙ্গলবার সকালেই উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় চলে এসেছেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্যের পরে একে একে বক্তৃতা করবেন অন্যরা। যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রসঙ্গত, এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে কার্যকারিণী বৈঠকে বিরোধী দলনেতা পদের প্রতি সম্মান দেখানোর সুযোগ পেয়েছে বিজেপি। বক্তৃতা করার কথা কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ ও অরবিন্দ মেননেরও।
রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক মেনন বক্তব্য রাখলেও সেই তালিকায় কেন পর্যবেক্ষক কৈলাসের নাম নেই তা নিয়ে জল্পনা এবং আলোচনা চলছে গেরুয়াশিবিরে। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ একটা সময়ে রাজ্যের পর্যবেক্ষক ছিলেন। তিনি অন্য দল থেকে নেতা নেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। মুকুল রায়কে নিয়ে ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান তুলেছিলেন সিদ্ধার্থ। পরে কৈলাস বাংলার দায়িত্ব পেয়ে নীতি বদলে দেন। তাঁর আমলেই মুকুলকে দিয়ে শুরু হয় অন্য দলের নেতা নেওয়া। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে যা বড় আকার নেয়।
বাংলায় বিজেপির ক্ষমতায় আসা নিয়ে কৈলাসের ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি। ছবি: পিটিআই
বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে দল বাংলার ক্ষমতাদখল থেকে অনেক দূরে থেমে যাওয়া কৈলাসের ‘অস্বস্তি’র কারণ হয়ে ওঠে। গণনার দিন শুরু থেকেই যখন বিজেপি পিছিয়ে পড়ছে, তখনও কৈলাস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, দিনের শেষে বিজেপি ক্ষমতায় আসার মতো শক্তি পাবে। কিন্তু কৈলাসের ভবিষ্যদ্বাণী মেলেনি। তার পর থেকেই কৈলাস বাংলার বিষয়ে কার্যত মৌনীবাবা। ইদানীং কালে রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করতে এসেছেন শিবপ্রকাশ, মেনন ছাড়াও অমিত মালব্য। ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি নজরে রাখতে এসেছিলেন পঞ্জাবের নেতা তরুণ চুঘ। কিন্তু কৈলাসকে আর সে ভাবে সামনে আসতে দেখা যায়নি। বস্তুত, জল্পনা শুরু হয়েছে তাঁকে বাংলার পর্যবেক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়েও।
ভোট বিপর্যয়ের জন্য কৈলাসকে দায়ী করা শুরু হয় মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই। রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় দিলীপ, শিবপ্রকাশ, মেননদের সঙ্গে কৈলাসকেও টুইটারে আক্রমণ করেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতিও সামলে দেওয়া গিয়েছিল। তবে কৈলাসকে নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয় রাজ্য ও সর্বভারতীয় বিজেপি-তে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যাওয়া মুকুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে। রাজ্য বিজেপি-তে এটা সর্বজনবিদিত যে, দিলীপ-মুকুল দ্বৈরথে কৈলাস বরাবর মুকুলের পক্ষ নিয়েছেনর। লোকসভা নির্বাচন থেকে বিধানসভায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুকুলের পরামর্শকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বেও মুকুলকে সামনে নিয়ে আসা কৈলাসের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল বলে দলের একাংশের অভিমত। তার জন্য দলে সমালোচনাও হয়েছিল। তবে তখন সে সবকে পাত্তা দেননি কৈলাস। রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষনেতার বক্তব্য, ‘‘মুকুল রায় তৃণমূলে চলে যাওয়ার পর এখন কৈলাস'জির পক্ষে মুখ দেখানোই মুশকিল! কারণ, আগে তিনি মুকুল-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কারও কথাই শুনতেন না। মুকুল দলবদল করবেন এমন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পরে তাঁকেই পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কৈলাসজি সেটাও করতে পারেননি।’’