অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। —ফাইল ছবি।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে তাঁর শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ থেকে ‘উচ্ছেদের হুমকি’ দেওয়ার বিরুদ্ধে এ বার সরব হলেন কবীর সুমন। শনিবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের অমর্ত্যের বাড়ির সামনে মুক্তমঞ্চে একক রবীন্দ্রগানে নিজের প্রতিবাদী কণ্ঠ শোনাবেন তিনি। সমাজমাধ্যমে এমনই জানিয়েছেন এই শিল্পী। তাঁর আহ্বান, ‘প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন’। তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবাদে শামিল হতে পারেন শামিল হতে পারেন যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন-সহ বহু বিশিষ্ট।
বুধবার সকাল থেকেই শান্তিনিকেতনে অমর্ত্যর বাড়ি ‘প্রতীচী’র পাশে মঞ্চ বাঁধার চলছে। বিশ্বভারতীর সঙ্গে অমর্ত্যর জমি বিতর্কে তাঁর পাশে দাঁড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিক্ষোভের তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। ৬ মে, শনিবার থেকে দু’দিনের এই অবস্থান বিক্ষোভ ছাড়াও সেখানে একটি পথসভার কর্মসূচি পালন করার কথা রয়েছে তৃণমূলের। এতে শামিল হওয়ার জন্য বুধবার সমাজমাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছেন কবীর সুমন। বিশ্বভারতীর তরফে অমর্ত্যকে যে ‘লাঞ্ছনা’র শিকার হতে হয়েছে, তা মনে করেন শিল্পী। ওই অনুষ্ঠানের পোস্টারে আহ্বান জানানো হয়েছে এর বিরুদ্ধে রবীন্দ্রগানে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় একক রবীন্দ্রগান পরিবেশন করবেন কবীর সুমন। তাঁর সঙ্গে শামিল হয়েছে ‘বিশ্বভারতী বাঁচাও কমিটি’ও।
অমর্ত্যের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমাল জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই অমর্ত্যকে পনেরো দিনের সময়সীমার মধ্যে ওই পরিমাণ জমি খালি করার নোটিস দিয়েছেন তাঁরা। ওই সময়ের মধ্যে জমি খালি না করলে বলপ্রয়োগ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। ৫ তারিখ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে দেওয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে অমর্ত্যের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাঁর নির্দেশ, অমর্ত্যের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সামনে বাউল শিল্পীদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসার। এ নিয়ে ওই বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিন্হাকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যদিও এর আগেও জমি বিতর্কে বার বার অমর্ত্যের সমর্থনে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার তাঁর নির্দেশের পর ৬ এবং ৭ তারিখ অবস্থান বিক্ষোভের জন্য অমর্ত্যের বাড়ির পাশে মঞ্চ বাঁধা শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির পদাধিকারীদের নেতৃত্বে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। এই অবস্থান মঞ্চে নানা ক্ষেত্রের শিল্পীদের পাশাপাশি তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও অংশগ্রহণ করবেন সূত্রের খবর। স্থানীয় কাউন্সিলর চন্দন মণ্ডল বলেন, ‘‘নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে অপমান করে তো বাঙালি জাতিকে অসম্মান করা হচ্ছে। তিনি এখানকার ভূমিপুত্র। এর বিরুদ্ধে এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ থেকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ রুখে দাঁড়াবেন। সমাজের বিশিষ্টজন-সহ বাউল সম্প্রদায়কে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নাগরিক হিসাবে আমরা ভারতরত্ন অমর্ত্য সেনের পাশে রয়েছি।’’
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের পাশাপাশি এতে ব্যবসায়ী সমিতিও যুক্ত হয়েছে। সমিতির সদস্য সুব্রত ভগৎ বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেনের বাড়িতে ভাঙচুর করার যে প্রস্তুতি নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, তার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব। এর বিরুদ্ধে গোটা বোলপুর তথা পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্টরা উপস্থিত হবেন। ৬ তারিখ এখানে আমাদের একটি পথসভাও হবে। এর প্রস্তুতি চলছে।’’ মঞ্চ বাঁধার কাজে নিযুক্ত সুশান্ত পাল নামে এক কর্মী বলেন, ‘‘১৪ ফুট বাই ৬০ ফুট বড় মঞ্চ বাঁধার নির্দেশ পেয়েছি। সেই অনুযায়ী মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে।’’
বিশিষ্টরা ছাড়াও বাউল সম্প্রদায়ের শিল্পীদেরও অবস্থানে শামিল হওয়ার কথা রয়েছে। বোলপুরের বাউলশিল্পী তরুণ খ্যাপা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান করলে অবস্থান বিক্ষোভে সকল বাউলের যাওয়া উচিত। বাউল সম্প্রদায় শান্তির বার্তা দেয়। আমি বিশ্বভারতী এবং শ্রদ্ধেয় অমর্ত্য সেন, দু’পক্ষকেই শান্তি বজায় রাখার কথা জন্য বলব।’’