জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
আদালতে তিনি কী বলতে পারেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন! এজলাসে বিচারকের সামনে আজ, সোমবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কী বলেন, বা না-বলেন, সে দিকে শুধু তদন্তকারী গোয়েন্দা বা আইনজীবী মহল নয়, রাজ্য রাজনীতির কুশীলবেরাও তাকিয়ে আছেন।
রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় ইডি হেফাজতে থাকা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিককে আজ কলকাতা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ করা হবে। গত শুক্রবার ইডি-র সঙ্গে হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষায় যাওয়ার পথে জ্যোতিপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের সামনে দিন চারেক পরেই সবাই সব কিছু জানতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন। এর ভিত্তিতেই মন্ত্রী আদালতে ‘বোমা ফাটাতে পারেন’ বলে রাজনৈতিক শিবিরে জল্পনা চলছে। আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, তিনি হয়তো আদালতে বিচারকের কাছে দুর্নীতির সম্পর্কে কোনও গুরুতর তথ্য তুলে ধরবেন। এরই মধ্যে জ্যোতিপ্রিয়কে যিনি মন্ত্রিসভায় নিয়োগ করেছিলেন, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুর্নীতির প্রশ্নে ফের নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চোরেদের রানি’ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসও তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেছে, তদন্ত থেকে বাঁচতেই শুভেন্দু বিজেপিতে গিয়েছেন।
সিজিও কমপ্লেক্স থেকে দু’দিন আগে কমান্ড (সেনা) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে জ্যোতিপ্রিয় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘‘আমাকে চক্রান্ত করে বিজেপিকে দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। মমতা’দি ও অভিষেক সব জানেন। আমি এখন মুক্ত। আপনারা চার দিন পরে সব কিছু জানতে পারবেন।’’ সেই চার দিন পার হচ্ছে সোমবারই। তাই রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা রয়েছে।
জ্যোতিপ্রিয় অবশ্য তিনি দলের সঙ্গে এবং দল তাঁর সঙ্গে আছে বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু মামলার বিষয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাসী স্বরের আড়ালে কী লুকিয়ে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। চার দিন পরে সব কিছু জানা যাবে, জ্যোতিপ্রিয়ের এই মন্তব্যর প্রেক্ষিতে ইডি-র এক তদন্তকারী অফিসারও বলেন, ‘‘হয়তো বিচারককেই কিছু বলবেন জ্যোতিপ্রিয়।’’ গত ২৬ নভেম্বর গভীর রাতে বাড়ি থেকে জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে ইডি। কিন্তু আদালতে পেশ করার সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গত সোমবার জ্যোতিপ্রিয়কে হাসপাতাল থেকে হেফাজতে পায় ইডি। ওই হাসপাতাল থেকে রবিবার সকালে কয়েক জন চিকিৎসক সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র দফতরে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয়ের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন বলে সূত্রের খবর।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির দায়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে আসছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। কাঁথির বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে এ দিন তিনি ফের দাবি করেছেন, ‘‘ভাই-ভাইপো কাউকে ছাড়বেন না প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই সপরিবার নিমন্ত্রণ পৌঁছে গিয়েছে। পার্থ-বালু জেলে গিয়েছে। এ বার আসল চোরও জেলে যাবে! আমরা সবাই অপেক্ষা করে আছি। শিক্ষা দফতর জেলে, খাদ্য দফতর জেলে, স্বাস্থ্যও যাবে জেলে। একটি টাকাও ছাড় দেবেন না নরেন্দ্র মোদী।’’ নাম না করলেও এ দিন শুভেন্দুর আক্রমণের নিশানায় ছিলেন অভিষেকও। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘মোদীজি বলেছেন, ভাই-ভাতিজাবাদ খতম করবেন, উৎখাত করবেন। এই ভাতিজা কে? কেউ আদর করে কয়লা বলে। কেউ আবার বলে তোলাবাজ। এই আলালের ঘরের দুলাল! আপনারা অপেক্ষা করে থাকুন। সময় কড়া নাড়ছে দরজায়। আসল চোর, চোরেদের রানি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার কী পরিণতি হয়, দেখতে থাকুন। আপনার দিন হাতেগোনা!’’ শুভেন্দু এ দিন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে দাবি করেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি চারশোর বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে।
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু চোর, বিজেপিই এই কথা কত দিন আগে বলেছে! সিবিআইয়ের এফআইআর-এ নাম থাকা এক জন চোর, তদন্ত থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়েছেন। যাঁর (মমতা) জন্য রাজনীতিতে সব কিছু পেয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেই নির্লজ্জ কুৎসা করে যাচ্ছেন! এর ফলও টের পাবেন।’’