SSC

Justice Ganguly: না, শিক্ষকতাই করব: বিচারপতির দেওয়া চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে ক্যানসার যোদ্ধা সোমা

সোমা বলেন, ‘‘চাকরিটা নিলে হয় তো সবই হত। কিন্তু আমার শিক্ষক হওয়ার যে স্বপ্ন, তা পূরণ হত না। আমি সব হারিয়েছি, এটা হারাতে চাই না।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৮:৩০
Share:

সোমা দাস, আন্দোনলরত এসএসসি-র চাকরিপ্রার্থী। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস। সেখানেই হাজির স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এ নিয়োগ চেয়ে আন্দোলনকারী এক জন। বিচারপতি তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি অন্য কোনও সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক? সরাসরি ‘না’ বলেন তিনি। তা শুনে বিচারপতি কেবল বললেন, ‘‘আদালত আপনাকে মনে রাখবে। শিক্ষকতার সরকারি চাকরির কোনও সুযোগ তৈরি হলে, আপনাকে খবর দেব।’’ ধীর পায়ে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান সোমা দাস। এসএসসি-তে নিয়োগ না পেয়ে গত কয়েক মাস ধরে তিনিও বাকিদের সঙ্গে আন্দোলন করছেন কলকাতার রাজপথে।

কিন্তু কেন তাঁকে ডেকে এমন প্রস্তাব দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়? বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে কখনও মেট্রো চ্যানেল, কখনও গাঁধী মূর্তির পাদদেশ, কখনও আবার কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে— এসএসসি-তে নিয়োগ চেয়ে ধর্নায় বসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেই আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছিলেন বীরভূমের নলহাটির সোমাও। দূরারোগ্য ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর মধ্যে শিক্ষকের চাকরি করার স্বপ্ন দেখছেন। এখনও।

Advertisement

অন্য দিকে, দুর্নীতি হয়েছে এই অভিযোগে নিয়োগ মামলা পৌঁছেছে হাই কোর্টে। চলছে শুনানি। এই পরিস্থিতিতেও নিয়োগপ্রার্থীরা আন্দোলন জারি রেখেছেন। ঠিক যেমন সোমা। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেও তিনি দাবি আদায়ের আন্দোলনে রাত জাগছেন কলকাতার রাজপথে। এই খবর পৌঁছয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। ঘটনাচক্রে তাঁর এজলাসেই চলছিল এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা। তিনি সোমাকে এক দিন আদালতে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

সেই মতো বুধবার বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে এজলাসে গিয়েছিলেন সোমা। সেখানেই তাঁর নিজের মুখে সব শোনেন বিচারপতি। তার পর তাঁকে কোনও একটি সরকারি চাকরি করার প্রস্তাব দেন। বিচারপতির প্রস্তাব শোনামাত্রই ফিরিয়ে দেন সোমা। তাঁর জবাব শুনে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনাকে আদালত মনে রাখবে। আগামী দিনে সরকারি শিক্ষকতার কোনও কাজের সুযোগ এলে, আপনাকে জানানো হবে। ভাল থাকবেন।’’

Advertisement

এজলাস থেকে বেরিয়ে বাংলায় স্নাতক সোমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আমার প্রতি সমব্যথী হয়ে অন্য কোনও দফতরে একটি চাকরি করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যোগ্যতার লড়াই লড়ছি। উনি চাকরিটা নিলে, হয়তো সবই হত, কিন্তু আমার শিক্ষক হওয়ার যে স্বপ্ন, তা পূরণ হত না। আমি সব হারিয়েছি, এটা হারাতে চাই না। উনি আমাদের হয়ে লড়ছেন, আমাদের লড়াই লড়ছেন। তাই আমি চাকরিটা নিয়ে সরে যেতে চাই না। আমি চাকরিটা না নিয়ে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে ওঁকে এটাই বোঝাতে চাই, স্যর আমি আপনার পাশে আছি। যদি চাকরি হয়, সবার হবে, একসঙ্গে হবে। আলাদা করে আমি চাকরিটা নিয়ে আমার হকের লড়াই থেকে সরে যেতে চাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement