বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতি মামলার তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে সিবিআই। আগামী দু’মাসের মধ্যে সেই তদন্ত শেষ করতে হবে। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়ে দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আগের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরেও কেন সিবিআই-ই তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাবে, তা-ও নিজের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতি মামলা নিয়ে যে এফআইআর করতে বলেছিল কলকাতা হাই কোর্ট, তার ভিত্তিতে একটি এফআইআর করে আলিপুর আদালতে দেয় সিবিআইয়ের আইও (তদন্তকারী অফিসার)। কোর্টে উপস্থিত আইনজীবীদের একাংশ জানান, এই নির্দেশ ‘নালিফাই’(বাতিল) হয়ে গিয়েছে। এটা নিয়ে হাই কোর্টের সর্বশেষ কী নির্দেশ রয়েছে, তা নিয়ে সিবিআইকে জানতে বলে আলিপুর আদালত।
মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশে প্রথমে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। পরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে করা সিবিআইয়ের এফআইআরও খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চ। এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেমোরেন্ডাম আপিল বা সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের কপি ছাড়া কী ভাবে ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিল? এর আগে এমন কোনও উদাহরণ বা এই হাই কোর্টের নিয়মে কি তা রয়েছে? এমন কিছু দেখাতে পারবেন?’’ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সওয়াল করে জানান, নির্দিষ্ট করে কিছু না থাকলেও ডিভিশন বেঞ্চের সেই ক্ষমতা রয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ তা পারে। আর ডিভিশন বেঞ্চের প্রক্রিয়া নিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চে ব্যাখ্যা দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘কিন্তু উপযুক্ত আবেদন ছাড়া কী ভাবে একটি নির্দেশের বিচার করল ডিভিশন বেঞ্চ? কোনও নিয়ম না থাকলে এটা কি হতে পারে? আমাকে এমন কোনও উদাহরণ দেখান, যেখানে এমন ঘটনা ঘটেছে।’’ এজি জানান, সিঙ্গল বেঞ্চের তুলনায় ডিভিশন বেঞ্চের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তারা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। বিচারপতি অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, এই মামলায় তদন্ত করবে সিবিআই। এই নির্দেশের প্রতিলিপি অবিলম্বে কলকাতা হাইকোর্ট এবং দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বিচারপতি সৌমেন সেন স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। তাই সুপ্রিম কোর্টের উচিত তার সমস্ত নির্দেশ খারিজ করা। এই মামলায় ‘রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকা’ ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন বিচারপতি সেন। কয়েক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তিনি। নির্দেশনামায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, কেন বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হবে না? তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘কেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও দু’বছর ধরে তাঁর বদলি হচ্ছে না? অন্য বিচারপতিদের তো বদলি হয়ে গিয়েছে। কে তাকে বাঁচাচ্ছে? আমি দেশের প্রধান বিচারপতিকে এটা দেখার জন্য অনুরোধ করব।’’ প্রসঙ্গত, দু’বছর আগেই বিচারপতি সেনকে ওড়িশা হাই কোর্টে বদলি করার সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশনামায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেছেন, ‘‘এফআইআর খারিজের যে নির্দেশ বিচারপতি সেন দিয়েছেন, সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে দিয়েছেন, ফলে সেটা বৈধ নয়। সিবিআইয়ের উচিত তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’’
সিবিআইকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার তদন্তভার দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির এই নির্দেশ দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই এই বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চে ওই নির্দেশে মৌখিক স্থগিতাদেশ দেয়। বুধবার বিকেলে এর পর আবার মামলাটি ওঠে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। সিবিআই এবং মামলাকারী তাঁকে মৌখিক স্থগিতাদেশের কথা জানায়। কিন্তু বিচারপতি পাল্টা জানান, স্থগিতাদেশের লিখিত প্রমাণপত্র না পেলে তিনি তা মানতে পারবেন না। এর পরেই সিবিআইকে তদন্তে এগোনোর নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এই মামলায় এফআইআরও দায়ের করতে বলেন। বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের সেই এফআইআর খারিজ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই জানিয়েছিল, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ একক বেঞ্চের নির্দেশে মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে তারা। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সিবিআইয়ের করা ওই এফআইআর খারিজ হবে। আদালত থেকে নেওয়া সব নথিও ফেরত দিতে হবে সিবিআইকে।
প্রসঙ্গত বুধবার প্রথমে মৌখিক ভাবে, পরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে লিখিত ভাবে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। তবে এফআইআর তখনও খারিজ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে মেডিক্যাল মামলায় রাজ্যের আবেদনের শুনানি ছিল ডিভিশন বেঞ্চে। সেই শুনানিতেই এফআইআর খারিজ করতে বলে হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।