বর্তমান চেয়ারম্যান ভাল, বললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ‘দুর্নীতি’ সরিয়ে শিক্ষাঙ্গনে স্বচ্ছতা আনতে মরিয়া রাজ্য সরকার। চাকরির দাবিতে আন্দোলনে বসেছেন শ’য়ে শ’য়ে চাকরিপ্রার্থী। এমন আবহে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নতুন সভাপতি পদে গৌতম পালের কাঁধে দায়িত্বভার তুলে দিয়েছে সরকার। তৈরি করা হয়েছে বিশেষ অ্যাড হক কমিটি। সেই কমিটিরই এ বার প্রশংসা করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার টেট (প্রাথমিক শিক্ষক পদে যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা) মামলার শুনানিতে প্রাথমিকের শিক্ষা পর্ষদের নতুন কমিটির প্রশংসা করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, অভীক মজুমদারের মতো ব্যক্তিরা আছেন। বর্তমান চেয়ারম্যানও ভাল। কোনও পুরসভার চেয়ারম্যানের মতো নয়। আশা রাখছি, আস্তে আস্তে পরিবর্তন হবে। একটা সময় আমিও পর্ষদের হয়ে কাজ করেছি। সবটা চিনি। এখনকার অবস্থা দেখলে খুবই খারাপ লাগে। এখন সেখানেই আমাকে সিআরপিএফ ঢোকাতে হল। আমি মনে করি তখন স্বচ্ছতা ছিল, দুর্নীতি ছিল না।’’ সম্মিলিত মেধাতালিকা প্রকাশ করা পর্ষদের মাস্টারস্ট্রোক ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারপতি।
সম্প্রতি, ১১ সদস্যের অ্যাড হক কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ওই কমিটিতে রয়েছেন লেখক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, ভাষা শিক্ষিকা স্বাতী গুহ, উচ্চ শিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান কৌশিকি দাশগুপ্ত, সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার এবং অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তীর মতো বিশিষ্টজনেরা।
বস্তুত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গত ২০ জুন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারিত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশে অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন রত্না চক্রবর্তী বাগচী। যদিও মানিক এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন। তারই মধ্যে পর্ষদের নতুন সভাপতি হিসাবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য গৌতম পালকে নিয়োগ করেছে রাজ্য। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে এসএসসি-র দফতর কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল।
এখনও পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মানিক ভট্টাচার্যকে পর্ষদ সভাপতি পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁরই নির্দেশে অঙ্কিতাকে বেতনের টাকাও ফেরত দিতে হয়েছে। এই আবহে সম্প্রতি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠিও গিয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কয়েক জন আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে লেখা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে কাজ করছি। অথচ চিঠিতে কেউ লিখল না, আমার জন্য কত জন দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ জেলে রয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন।’’ তবে আইনজীবীরা না বললেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কাজে উৎসাহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার একটি মামলার শুনানির ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘নব মহাকরণ হস্তান্তরের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি গিয়ে বলি, ম্যাডাম আমি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আমি নমস্কার করি, উনিও পাল্টা নমস্কার করেন। আমি বলি, আমি কিছু কথা বলতে যদি পারতাম.... উনি বললেন, এখন তো সুযোগ নেই, আপনি ভাল করছেন, উনি জানান, আপনার নাম শুনেছি, আপনি অনেক কাজ করছেন। আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান।’’