মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নের বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। —ফাইল ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার ‘রেকর্ড’ হাতে পেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু সে দিন আলোচিত কিছু বিষয়ের উল্লেখ ‘রেকর্ডে’ নেই বলে অভিযোগ। প্রায় দু’সপ্তাহ পরে এই সংক্রান্ত অনুযোগ জানিয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে আবার ইমেল করেছে পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট।
আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একাধিক পরিবর্তনের দাবি নিয়ে ধর্মতলায় অনশনে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন নবান্নে। সেই বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল। বৈঠকে কী কী আলোচনা হয়েছে, তা ‘রেকর্ড’ আকারে পরে জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই ‘রেকর্ড’ নিয়েই তাঁরা অসন্তুষ্ট। পাল্টা ইমেল করে অসন্তোষের কারণগুলি জানানো হয়েছে মুখ্যসচিবকে।
ইমেলে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ‘রেসিডেন্ট ডক্টর্স’ অ্যাসোসিয়েশন’ (আরডিএ) গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকের রেকর্ডে তার উল্লেখ নেই। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ না বললেও বৈঠকের রেকর্ডে ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই নির্বাচনের জন্য আরডিএ গঠন অত্যন্ত জরুরি, জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে আরডিএ তৈরির দাবি আমরা আবার জানাচ্ছি। ভারতীয় সংবিধানের ১৯ ধারা অনুযায়ী এই ধরনের সংগঠন তৈরি আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। ২১ তারিখের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তা রেকর্ডে রাখা হয়নি। আমাদের অনুরোধ, আরডিএ-র বিষয়টি উল্লেখ করে নতুন করে আলোচনার রেকর্ড আমাদের পাঠানো হোক।’’
ইমেলে ডাক্তারেরা আরও জানিয়েছেন, বৈঠকের ‘রেকর্ড’ অনুযায়ী, মেডিক্যাল কলেজগুলির সমস্ত অভিযোগ প্রথমে শুনবেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ। তার পর তার রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে যাবে মুখ্যসচিবের কাছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের উল্লেখ করে ডাক্তারেরা বলেছেন, ওই অভিযোগগুলি অধ্যক্ষের কাছ থেকে সরাসরি মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে পাঠানো উচিত। রাজ্য সরকারের কাছে নয়।
ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে মামলার কারণে নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে আছে বলে ‘রেকর্ডে’ জানানো হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, কোনও একটি সংরক্ষণের মামলার কারণে গোটা নিয়োগপ্রক্রিয়া থমকে থাকতে পারে না। এ ছাড়া, বিভিন্ন হাসপাতালে কেন্দ্রীয় রেফারেল সিস্টেম সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাব ডাক্তারেরা রাজ্য সরকারকে দিয়েছিলেন। তা নিয়েও এখনও কোনও বক্তব্য জানায়নি সরকার, ইমেলে সেই অনুযোগও করা হয়েছে।
ডাক্তারেরা আরও জানিয়েছেন, সে দিনের বৈঠকে আলোচনা হলেও কলেজ স্তরের অংশীদারদের (স্টেকহোল্ডার) কমিটির বৈঠক এখনও কোথাও হয়নি। এখনও তৈরি হয়নি কলেজ পর্যায়ের কোনও অভিযোগ নিষ্পত্তি সেল, যা বৈঠকে আলোচিত ছিল।
হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী এবং ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এখনও সেই সংক্রান্ত কোনও উদ্যোগ জুনিয়র ডাক্তারদের চোখে পড়েনি। অধিকাংশ হাসপাতালেই দেখা মেলেনি সরকারের ‘উইনার্স টিম’ এবং ‘শক্তি টিম’-এর। এসটিএফের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি। তা-ও এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, ইমেলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।