দিলীপ ঘোষকে জবাব জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি কিঞ্জল নন্দের। —ফাইল চিত্র।
আরজি করের নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারেরা টানা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। সঙ্গে ছিল হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও নিরাপত্তার দাবি। তাঁদের সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে গিয়ে দৃশ্যত এক নাগরিক আন্দোলনের চেহারা নিয়েছিল আন্দোলন। তবে সেই আন্দোলনকে ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। প্রশ্ন তুলেছেন, “এত নাটক করে কী লাভ হল?” দিলীপের ওই মন্তব্যের পাল্টা দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরাও। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের আন্দোলন হিসাবেই ব্যাখ্যা করছেন তাঁরা। নাম না করে বিজেপি নেতাকে তাঁদের প্রশ্ন, রাজনীতিক হওয়ার সুবাদে এবং সেই ক্ষমতাবলে দিলীপ কী পদক্ষেপ করেছেন নির্যাতিতার বিচারের জন্য?
মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানে এক কর্মসূচি থেকে দিলীপ প্রশ্ন তোলেন আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে। আন্দোলনের সমালোচনায় তাঁর বক্তব্য, “এত নাটক করে কী লাভ হল? যাঁরা বদলি হলেন, তাঁরা প্রোমোশন পেলেন। মোমবাতি জ্বেলে, তালি দিয়ে কী লাভ হল? কেন মানুষ দেড় মাস কষ্ট করলেন? হাসপাতালের যে অব্যবস্থা, তার কি কোনও পরিবর্তন হল? এই প্রশ্ন মানুষের মুখে ঘুরছে।” উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে লাগাতার প্রতিবাদ-আন্দোলন, কর্মবিরতি চালিয়ে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কখনও লালবাজার অভিযান করেছেন, কখনও স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করেছেন। তাঁদের আন্দোলনের আবহেই কলকাতা পুলিশের কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা পদে বদল এসেছে। হাসপাতালের নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নে একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার।
দিলীপের এই মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হয়েছিল আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম প্রতিনিধি কিঞ্জল নন্দের সঙ্গে। এই আন্দোলন যে শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সীমিত ছিল না, সে কথা বুঝিয়ে দেন অভিনেতা-চিকিৎসক। তাঁর কথায়, “যেটুকু হয়েছে, তা এই আন্দোলনের জন্যই হয়েছে। মানুষের আন্দোলনকে নাটক বলা হলে সাধারণ মানুষকেই অপমান করা হয়। তাঁদের (রাজনীতিকদের) হাতেও তো অনেক ক্ষমতা রয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাঁরা কী করেছেন? আমরা ছাত্রেরা আন্দোলন করেছি বিচারের জন্য। যত ক্ষণ বিচার না পাব, আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের শুনানি এত কেন পিছনে, সেই বিষয়ে তাঁর কী বক্তব্য? সেটা তিনি বলুন।”
আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা দীর্ঘ দিন ধরে কর্মবিরতিতে ছিলেন। গত শনিবারই তাঁরা ফের আংশিক ভাবে কাজে ফিরেছেন। জরুরি পরিষেবায় কাজে ফিরেছেন তাঁরা। বন্যা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পুলিশ কমিশনার ও দুই স্বাস্থ্যকর্তার বদলি থেকে শুরু করে হাসপাতালের নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের যে সিদ্ধান্তগুলি সম্প্রতি রাজ্য সরকার নিয়েছে, সেগুলির দাবি উঠে এসেছিল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন থেকেই।