(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের দাবি জানালেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। নির্যাতিতার বিচার, হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত ১০ দফা দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অনিকেতও ৬ অক্টোবর থেকে অনশনে বসেছিলেন। শরীর ভাঙতে শুরু করেছিল অনশনে থাকার কারণে। ১০ অক্টোবর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান অনিকেত। শুধু অনিকেতই নন, আরও পাঁচ জন জুনিয়র ডাক্তার অনশনে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন অনিকেত। হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর তিনি বলেন, “অনশনকারীরা ধীরে ধীরে অসুস্থ হচ্ছেন। আমি মনে করি, প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা উচিত। আমাদের ১০ দফা দাবির যৌক্তিকতাকে মেনে অতি দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করা উচিত।” প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন কর্মসূচি বৃহস্পতিবার ১৩ দিনে পড়ল। ৫ অক্টোবর রাত সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়েছিল অনশন কর্মসূচি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক জুনিয়র ডাক্তার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তেমনই একাধিক জুনিয়র ডাক্তার নতুন করে যোগ দিয়েছেন ‘আমরণ অনশন’-এ।
অনিকেত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও, পাঁচ জুনিয়র ডাক্তার (কলকাতায় তিন জন, উত্তরবঙ্গে দু’জন) এখনও চিকিৎসাধীন। আপাতত ধর্মতলা ও শিলিগুড়ি মিলিয়ে আট জন জুনিয়র ডাক্তার ‘আমরণ অনশন’ চালাচ্ছেন। শরীর কমবেশি দুর্বল হয়েছে সকলেরই। স্নিগ্ধা হাজরা, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা একেবারে শুরুর দিন থেকে অনশনে রয়েছেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। এমন অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী যাতে দ্রুত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন, সেই আর্জি জানালেন অনিকেত।
পাশাপাশি সিবিআইয়ের চার্জশিট এবং সুপ্রিম কোর্টে বুধবারের শুনানি নিয়েও দৃশ্যত হতাশ সদ্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত। তাঁর কথায়, “নির্যাতিতার বিচার এখনও অধরা। এতগুলি দিন কেটে গেল। কিন্তু ৯ অগস্ট সেমিনার হলের ভিতরে কী ঘটেছিল, ওই ঘটনার উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখনও অধরা থেকে গেল।”
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও আপাতত অনশনমঞ্চে ফেরার সম্ভাবনা নেই অনিকেতের। তিনি জানিয়েছেন, ডাক্তারেরা তাঁকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ মেনেই আপাতত চলবেন তিনি। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে বাকি বিষয়গুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন অনিকেত।
পাশাপাশি কৃষ্ণনগরকাণ্ড নিয়েও এ দিন মন্তব্য করেছেন অনিকেত। এই ঘটনাকে ‘সামাজিক এবং মানবিক অবক্ষয়’ হিসাবে ব্যাখ্যা তাঁর। এই অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন অনিকেত। তাঁর কথায়, এই সচেতনতা গড়ে তোলাও তাঁদের আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, “আরজি করে স্থাপন করা মূর্তির মাধ্যমেও আমরা এই অবক্ষয় মুছে দেওয়ার জন্য বার্তা দিতে চেয়েছিলাম। অবক্ষয় মুছতে না পারলে, এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।” এই ধরনের ঘটনাগুলি রুখতে প্রশাসনিক স্তরে ‘সদিচ্ছা’-র প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি।