খড়িবাড়ি থেকে গ্রেফতার হন জুহি

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, একেবারে গোপনে তাদের সেই তদন্ত শুরু হয়েছিল। শুরুতে শিশু পাচারের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ জোগাড়েই তদন্তকারী গোয়েন্দা আধিকারিকরা জোর দিচ্ছিলেন।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:২৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সময়টা ২০১৫ সালের অগস্ট মাস। জলপাইগুড়ি সিডব্লিউসি-র দায়িত্ব নেন কমিটির সদস্যরা। এবং দায়িত্ব নিয়েই নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার পরিচালিত হোম ‘বিমলা শিশুগৃহের’ নানা অনিয়ম নজরে আসে তাঁদের। সেই নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের কর্ণধার ছিলেন চন্দনা চক্রবর্তী। তাঁর সেই হোম ‘বিমলা শিশুগৃহ’ থেকে সতেরোটি শিশুকে বেআইনিভাবে দত্তক দেওয়া হয়েছে বলে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে চিঠি পাঠান এক সদস্য। ওই বছরের জুন মাসে সিডব্লিউসি-র একাধিক সদস্য একই অভিযোগ তুলে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে চিঠি পাঠান। ডিসেম্বরে ঘটনার তদন্ত শুরু করে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। কিন্তু এর কিছু দিনের মধ্যেই গোটা ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, একেবারে গোপনে তাদের সেই তদন্ত শুরু হয়েছিল। শুরুতে শিশু পাচারের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ জোগাড়েই তদন্তকারী গোয়েন্দা আধিকারিকরা জোর দিচ্ছিলেন। সিআইডি সূত্রের খবর, সেই তদন্ত ও তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে গিয়েই জুহির নামটা উঠে আসে। জুহি তখন বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। জুহির বাবা রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির পরিবেশে বড় হওয়া এবং বাবার সঙ্গে নানা সময়ে দলের কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার জেরে জুহিও গেরুয়া শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হন তিনি।

এই তদন্তের প্রেক্ষিতেই ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চন্দনা ও বিমলা শিশুগৃহের আর এক আধিকারিক সোনালি মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় একটি এফআইআর-ও দায়ের করা হয়। তাতেই জুহির কথা উল্লেখ ছিল।

Advertisement

চন্দনাকে গ্রেফতারের একদিন পরেই জুহি সংবাদমাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। কিন্তু তত দিনে তিনি উধাও। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল। বিজেপির নেতা কৈলাস বিজয়বর্গী ও বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জুহিকে আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগও তুলতে শুরু করেন তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ। শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি নেপাল সীমান্ত লাগোয়া খড়িবাড়ি থেকে জুহিকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। পরদিন আদালতে পেশ করে তাঁকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় সিআইডি। তারপর থেকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতেই রয়েছেন জুহি।

সিআইডি সূত্রের খবর, জেরায় চন্দনা গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছিলেন, জুহি তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। চন্দনার সংস্থায় বড় পদ পেতে জুহি মোটা টাকা লগ্নি করেছিলেন বলেও অভিযোগ কোনও কোনও মহলের। জুহি অবশ্য শুরু থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। চন্দনাই তাঁদের মেয়েকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন জুহির বাড়ির লোকেরাও। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে জুহির জামিনের পর বিজেপির জলপাইগুড়ির প্রাক্তন জেলা সভাপতি দীপেন প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকেই বলছিলাম জুহিকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ তৃণমূল জানিয়েছে, তারা শিশু পাচার কাণ্ড নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement