শিশির অধিকারী এবং জেপি নড্ডা। নিজস্ব ছবি।
শিশির অধিকারী ও সুনীল মণ্ডল। কাঁথি ও বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ। দু’জনেই গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কাছাকাছি এসেছিলেন। শিশিরকে দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মঞ্চে। আর সুনীল সরাসরি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপি নবান্ন দখল করতে পারেনি। শিশির খাতায়কলমে তৃণমূলেই রয়েছেন। সুনীল ঘোষিত ভাবেই তৃণমূলে ফিরেছেন। সেই শিশির ও সুনীলের লোকসভা এলাকায় সভা করতে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। কিন্তু কেন?
গত লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশেই হারা আসনে জিততে কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। সেটা বাংলাতেও। সেই লক্ষ্যে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে নড্ডার সভা করেছেন জানুয়ারি মাসে। এ বার নড্ডার লক্ষ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুর। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, শুভেন্দুর পিতা শিশিরের লোকসভা কেন্দ্র— কাঁথি।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে কলকাতায় আসছেন নড্ডা। রবিবার কাঁথি ও কাটোয়ায় কর্মিসভার আগে দু’জায়গার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করারও কথা রয়েছে তাঁর। সেই বৈঠকে দলের নিচুতলার পরিস্থিতি, বিশেষ করে বুথ পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠনের কাজ কতটা এগিয়েছে, মূলত তা নিয়েই আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে রাজ্যে ২৫টি লোকসভা আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মতো কোন আসনে জোর দেওয়া হবে, তার তালিকা তৈরির কাজও অনেক দিন ধরেই চলছে। বিজেপি সূত্রে খবর, গত বছর সেই রকম একটি তালিকা তৈরি হয়। রাজ্যে হেরে যাওয়া ২৪টির মধ্যে ১৯টি আসনে বিশেষ জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দল। সেই তালিকা থেকে যে ৬টি আসন বাদ দেওয়া হয়, তার মধ্যেই ছিল শিশিরের কাঁথি। কিন্তু সেই কাঁথিতেই এখন ‘বিশেষ ভাবে নজর’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই কারণেই কৃষ্ণনগরের সভার পর নড্ডার তালিকায় কাঁথি। শুধু বাংলাতেই নয়, গোটা দেশেই বিজেপির প্রথম তালিকায় ছিল হেরে যাওয়া ১৪৪টি আসন। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১৬০। চলতি বছরে তার প্রতিটিতেই নড্ডা অথবা শাহের সভা করার কথা। বাংলাতেও সেই ভাবে দুই নেতা ২৪টি আসন ভাগ করে নেবেন। কাঁথি পেয়েছেন নড্ডা।
গত লোকসভা নির্বাচনে কাঁথিতে তৃণমূল পেয়েছিল ৫০.৩০ ভোট। আর বিজেপির ঝুলিতে আসে ৪২.৪০ শতাংশ। শিশির জিতেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৬৮ ভোটে। তার পর রাজনীতির জল বহু দূর গড়িয়েছে। গত বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। সেই সময়েই ভোট-প্রচারে আসা শাহের জনসভায় দেখা যায় শিশিরকে। গত বিধানসভা ভোটে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভাগুলিতে ভাল ফলও করেছিল বিজেপি। ৭টির মধ্যে ৪টিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। বাকি ৩টিতে দ্বিতীয় স্থানে। তার নিরিখে কাঁথি লোকসভা আসনে তারা খানিক এগিয়েই রয়েছে বলেই মনে করে গেরুয়া শিবির। বিজেপি সূত্রের দাবি, এমন সম্ভাবনাময় আসনে একটু নজর দিলেই যে জেতা সম্ভব, তা বুঝতে পেরেই হয়তো এই মতবদল। যদিও গত পুরভোটেই কাঁথিতে খারাপ ফল করেছে দল। বিজেপির এক রাজ্য নেতার পাল্টা যুক্তি, ‘‘পুরভোট স্থানীয় স্তরের ভোট। তার সঙ্গে লোকসভা ভোটের তুলনা হয় না।’’
কাঁথিতে নড্ডার সভাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা এখন পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বে থাকা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘জেপি নড্ডা নিজের রাজ্য হিমাচল প্রদেশেই তো বিজেপি হেরেছে। তা ছাড়া কাঁথি তো নাকি শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারীদের ঘাঁটি! যদি ঘাঁটিই হয়ে থাকে, তা হলে সেখানে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি কেন সভা করতে আসবেন। শুভেন্দুদের তো বলার কথা যে, ওই আসনটি তাঁরাই দেখে নেবেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই।’’
অন্য দিকে, বিজেপির কাটোয়ায় সভার লক্ষ্য বর্ধমান পূর্বের লোকসভা আসন। গত বিধানসভা ভোটে ওই লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি আসনেই হেরেছে বিজেপি। তবে হারের ব্যবধান হিসাব করেই বিজেপি বর্ধমান পূর্বকে ‘সহজ’ আসন বলে মনে করছে।
বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনে দেশে ৩০৩টি আসনে জেতে। হেরে যাওয়া আসনের মধ্যে শরিক দলের হাতে থাকা এবং খুব কঠিন গুলি বাদ দিয়ে ১৬০টি আসন চিহ্নিত করেছে। প্রতিটি আসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। কেউ কেউ একাধিক আসনের দায়িত্ব পেয়েছেন। বিজেপি চায়, সংসদে বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে ওই আসনগুলিতে প্রচারে ঝড় তোলা হবে। তবে তার আগেই নড্ডার রাজ্য সফর। সোমবার বাজেট অধিবেশন শেষ হচ্ছে। তার আগে শনি ও রবিবার ছুটির দিনকে কাজে লাগাতে চেয়েই এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার বঙ্গসফর করতে চলেছেন বিজেপি সভাপতি। দলীয় সূত্রে দাবি, নড্ডার সফরের পরে দুই লোকসভা আসনের পরিস্থিতি হাতেকলমে বুঝতে ও সভা করতে এ মাসের শেষে বা মার্চের গোড়ায় রাজ্য সফরে আসবেন শাহ। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে দু’টি সভা করতে পারেন। তার মধ্যে একটি হওয়ার কথা বীরভূম জেলায়।