বাংলা ভাষার সঙ্গে নড্ডার আলাপ নতুন নয়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থনে কলকাতায় মিছিল করতে এসেছিলেন প্রায় এক বছর আগে। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার থেকে সেই মিছিল নিয়ে শ্যামবাজার পৌঁছে যে ভাষণ বিজেপির তৎকালীন কার্যকরী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা দিয়েছিলেন, তাতে বেশ কয়েকটা বাংলা লাইন ছিল। অবাঙালি নেতার মুখে ‘স্বতঃস্ফূর্ত বাংলা’ শুনে হাততালিও পড়েছিল। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, সোমবার শিলিগুড়িতে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে অনেকক্ষণই বাংলায় ভাষণ দেবেন নড্ডা। তার বয়ানও তৈরি।
শিলিগুড়ির বৈঠক মূলত উত্তরবঙ্গের জন্য। তাই উত্তরবঙ্গের সব জেলা কমিটির নেতৃত্বকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। ডাকা হয়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নেতাদেরও। রাজ্য বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্ব তথা সামনের সারির প্রায় সকলেরই বৈঠকে থাকার কথা। থাকার কথা বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও।
প্রথমে ঠিক ছিল, শিলিগুড়িতে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি নিজেই সেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। পরে রাজ্য বিজেপি-কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানায়, অন্য ব্যস্ততার কারণে শাহ এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারছেন না। তখন ঠিক হয় যে, নড্ডা আসবেন উত্তরবঙ্গের বৈঠকে। এবং প্রস্তুতি নিয়েই শিলিগুড়ি আসছেন নড্ডা নামছেন। সেবক রোডের একটি হোটেলে আয়োজিত সাংগঠনিক বৈঠকে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার জন্য তিনি জুৎসই প্রস্তুতি নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিজেপির পুজোর রাশ কৈলাস ও মুকুলের হাতে
শ্যামবাজারে নড্ডা আচমকা বাংলা বলতে শুরু করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘সবকিছুতে খালি হবে না, হবে না, হবে না! আরে কী হবে না বাবা? সব হবে!’’ পরে জানা গিয়েছিল, নড্ডার স্ত্রী বাঙালি। তা ছাড়া নড্ডা নিজেও দীর্ঘদিন মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ের বাঙালি এলাকায় কাটিয়েছেন। তাই বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁর আলাপ নতুন নয়। শিলিগুড়ির ভাষণের বেশ খানিকটা অংশই নড্ডা বাংলায় দিতে চান। সে কাজে তাঁকে সাহায্য করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ঘটনাচক্রে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ভাষণে মাঝেমধ্যে বাংলা বলেন। তখনও তিনি বাবুলেরই সহায়তা নিয়ে থাকেন। ভাষণের কয়েক লাইন বাংলায় রেকর্ড করে বাবুল প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন। বাংলা লাইনগুলো হিন্দি বা ইংরেজি হরফে লিখেও দেন। নড্ডার ক্ষেত্রেও সেই পদ্ধতিই অনুসৃত হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে সোমবার প্রথম ৫ থেকে ৭ মিনিট নড্ডা একটানা বাংলায় বলবেন।
আরও পড়ুন: অভিমান ভুলে মমতাকে পাগড়ি উপহার দিতে চান বলবিন্দরের স্ত্রী
এ রাজ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা বিজেপি-কে ‘বাঙালি বিরোধী’ বা ‘উত্তর ভারতীয় দল’ বলে মাঝেমধ্যেই আক্রমণ করে। বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতারা সে তকমা গা থেকে মুছতে তৎপর। বাংলায় ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তও সেই তৎপরতারই অঙ্গ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। নড্ডার সভার প্রস্তুতি নিতে রাজ্য বিজেপির নেতা সায়ন্তন বসু কয়েক দিন আগেই শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন। প্রস্তুতি দেখভাল করতে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেনন, দার্জিলিঙের সাংসদ তথা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় মুখপাত্র রাজু বিস্তা, রাজ্য বিজেপি-র যুগ্ম সংগঠন সম্পাদক কিশোর বর্মন, সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্র বসু। রবিবার বিকেলে দলের পৌঁছেছেন মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সোমবার সকালে পৌঁছবেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
বিশেষ বিমানে নড্ডা দিল্লি থেকে বাগডোগরায় নামবেন বেলা ১১টা নাগাদ। তাঁর সঙ্গে বাবুলেরও থাকার কথা। প্রথমে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মাকে শ্রদ্ধা জানাবেন বিজেপি সভাপতি। তার পরে যাবেন আনন্দময়ী কালীবাড়িতে পুজো দিতে। পুজো সারার পরেই শুরু সাংগঠনিক বৈঠক এবং বাংলায় ‘সহজ পাঠ’।