খবর সংগ্রহ করতে আক্রান্ত রাজ্যের বহু সাংবাদিক
রবিবার রাজ্যের ১০৮ পুরসভায় ভোটগ্রহণ-পর্ব শুরু হতেই বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসছিল। কোথাও ভুয়ো ভোটারদের ঘিরে বিক্ষোভ, তো কোথাও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে অশান্তি। বেলা যত গড়িয়েছে, অশান্তি এবং অভিযোগ বেড়েছে। সেই খবর সংগ্রহ করতে গিয়েই দিকে দিকে আক্রান্ত রাজ্যের বহু সাংবাদিক। দুষ্কৃতীদের হামলায় রক্তাক্ত হন অনেকে। তাঁদের বেশ কয়েক জনকে হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়। শুধু মারধরই নয়, কেড়ে নেওয়া হয়, ভেঙে ফেলা হয় চিত্র সাংবাদিকদের ক্যামেরা, বুম ইত্যাদিও।
পুরভোটে সর্বাধিক নজরে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন এবিপি আনন্দের সাংবাদিক প্রকাশ সিন্হা ও তাঁর সঙ্গে থাকা চিত্র সাংবাদিক। কাঁথি পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে রহমানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে হামলার মুখে পড়়েন তাঁরা। বুথের বাইরে অবৈধ জমায়েতের অভিযোগ পেয়ে প্রকাশ সেখানে যান। অভিযোগ, কেন বুথের বাইরে জমায়েত করা হয়েছে, তা জানতে চাওয়ায় প্রকাশ এবং ওই চিত্রসাংবাদিকের উপর দুষ্কৃতীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। চিত্র সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে তা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলা হয়। দু’জনকেই মাটিতে ফেলে ঘুষি, লাথি মারা হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁদের স্থানীয় দারুয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে দু’জনকেই কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর দমদম পুরসভায় ভোটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত এবিপি আনন্দের আরও এক সাংবাদিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ও চিত্র সাংবাদিক শ্যামল জানা। উদয়পুরের আলিপুর খেলার মাঠ এলাকায় সিপিএম প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ পেয়ে খবর সংগ্রহ করতে যান সুকান্ত। সেখানেই মারধর করা হয় তাঁদের। তাঁদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলে দেওয়া হয় নর্দমায়। জঙ্গলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় বুম। জখম অবস্থায় সুকান্ত ও শ্যামলকে বেলঘরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হুগলির শ্রীরামপুরেও আক্রান্ত হতে হয়েছে এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
উত্তর দমদম পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত হন টিভি৯ বাংলার সাংবাদিক সৌরভ দত্ত এবং ওই প্রতিষ্ঠানেরই চিত্রসাংবাদিক দীপঙ্কর জানা। দুষ্কৃতীদের বেধড়ক মারে ডানলপের একটি নার্সিংহোমে দীপঙ্করকে ভর্তিও করানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনারই হালিশহর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত টিভি৯ বাংলার আর এক সাংবাদিক অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়ও। ছাপ্পার অভিযোগের খবর খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন অর্ঘ্য। ওই সময়েই তাঁর উপর চড়াও হন দুষ্কৃতীরা। তাঁর পিঠে, মাথায় ঘুষিও মারা হয় বলে অভিযোগ। ওই জেলার গারুলিয়া পুরসভায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন জি২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্ত।
জলপাইগুড়ি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত হয়েছেন জি২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক প্রদ্যুৎ দাস ও তাঁর সঙ্গে থাকা চিত্র সাংবাদিক। ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় ইন্দিরা কলোনির একটি বুথে গিয়েছিলেন প্রদ্যুৎ। সেই সময়েই তাঁর উপর উপর চড়াও হন দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, তাঁর মাথায়-বুকে এলোপাথাড়ি লাথি মারা হয়। ভেঙে দেওয়া হল চিত্র সাংবাদিকের বুম ও ক্যামেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন যে কোনও পেশাগত সহকর্মীর উপর হামলার বিরোধিতা করে। আগেও করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। তাঁরা যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই যুক্ত হোন না কেন। জেলায় জেলায় সাংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণকারী দুষ্কৃতীদের রাজনৈতিক পরিচয় কী তার নিশ্চিত তথ্য আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে নেই। কিন্তু দুষ্কৃতীরা যে দলের পরিচয়েই আসুক না কেন, তারা দুষ্কৃতীই। পুলিশ এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন নিশ্চয় তাঁদের পরিচয় বার করবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।