ভাটপাড়া পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
দিনভর নাটক শেষে ভাটপাড়া পুরসভার দখল রয়ে গেল বিজেপির হাতে। দুপুরে জানা গিয়েছিল, এ রাজ্যে বিজেপির হাতে থাকা শেষ পুরবোর্ডও ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। সন্ধ্যায় কলকাতা হাইকোর্ট জানাল, অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ, তার ভিত্তিতে হওয়া ভোটাভুটিও খারিজ। সুতরাং অর্জুন সিংহের গড়ে আপাতত স্বস্তি ফিরল গেরুয়া শিবিরে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে ও পরে এ রাজ্যের যতগুলি পুরবোর্ড রং বদল করে বিজেপিতে শামিল হয়েছিল, তার মধ্যে ভাটপাড়া ছিল অন্যতম। লোকসভায় বিজেপি এ রাজ্যে চমকে দেওয়া ফলাফল করেছিল ঠিকই, কিন্তু তার কয়েক মাস পর থেকেই ফের ঘর গুছিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। তার অঙ্গ হিসেবেই বিজেপির দিকে চলে যাওয়া পুরবোর্ডগুলি তৃণমূল পুনর্দখল করেছে একে একে। বাদ রয়েছে শুধু ভাটপাড়া। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের খাসতালুক ভাটপাড়া পুনর্দখল করতেই সবচেয়ে বেগ পেতে হচ্ছিল তৃণমূলকে। বৃহস্পতিবার সে চেষ্টা প্রায় সফল হয়ে গিয়েও হল না।
২০০১ সাল থেকে একটানা তৃণমূলের টিকিটে ভাটপাড়ায় জিততে থাকা বিধায়ক অর্জুন সিংহ এ বারের লোকসভা নির্বাচনের কিছু দিন আগে বিজেপিতে যোগ দেন। ভাটপাড়া পুরসভার অধিকাংশ তৃণমূল কাউন্সিলরও অর্জুনের সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দেন। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে অর্জুন বিজেপির টিকিটে জিতে সংসদে যান। আর অর্জুনের ছেড়ে দেওয়া ভাটপাড়া বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জেতেন তাঁর ছেলে পবন সিংহ। পুরসভার চেয়ারম্যান পদে অর্জুন বসান ভাইপো সৌরভ সিংহকে। সেই সৌরভের বিরুদ্ধেই অনাস্থা এনেছিল তৃণমূল। কিন্তু আদালতের রায়ে তা এ দিন খারিজ হয়ে গেল।
বেশ কিছু দিন ধরেই তৃণমূল দাবি করছিল যে, ভাটপাড়া পুরসভায় বিজেপি গরিষ্ঠতা হারিয়েছে। অনাস্থা বৈঠক ডাকার জন্য চেয়ারম্যানের উপরে চাপ তৈরি করা হচ্ছিল। চেয়ারম্যান ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চান। কিন্তু তৃণমূল সময় দিতে রাজি ছিল না। ৩৫ আসনের পুরসভায় ২২ জনই এখন তৃণমূলের দিকে রয়েছেন বলে তৃণমূল দাবি করছিল।
৩০ ডিসেম্বর ভাটপাড়ার ৩ তৃণমূল কাউন্সিলর অনাস্থার নোটিস দেন। তার ভিত্তিতেই এ দিন ভোটাভুটি হয়। বিজেপি যে হেতু এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল, তাই বিজেপির দিকে থাকা কাউন্সিলরদের কেউই এ দিন যাননি পুরসভায়। কিন্তু তৃণমূলও ২২ জন কাউন্সিলরকে নিজেদের পক্ষে দেখাতে পারেনি। ১৯ জনকে তারা হাজির করতে পেরেছিল ভোটাভুটিতে। বিজেপি অনুপস্থিত থাকায় ১৯-০ ভোটে তৃণমূলকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়।
ভাটপাড়ার পুরবোর্ড অর্জুন সিংহের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারার আনন্দে স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন এলাকার তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু সে উচ্ছ্বাস বেশি ক্ষণ স্থায়ী হল না। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, ৩ কাউন্সিলের দেওয়া নোটিস বা এ দিনের ভোটাভুটি সবই বাতিল।
হাইকোর্টের এই নির্দেশের ফলে বিজেপির হাতেই রয়ে গেল পুরবোর্ড। অনাস্থা আনা বা তার উপরে ভোটাভুটি— সবই পুর আইন মেনেই হবে বলে হাইকোর্ট জানিয়েছে। ফলে শক্তি পরীক্ষায় বিজেপি-কে যেতেই হবে। কিন্তু যতটা তড়িঘড়ি তার আয়োজন তৃণমূল করতে চেয়েছিল, তা হাইকোর্ট হতে দিল না।