জেএনইউ-তে হামলার পর ঐশীর এই ছবি ছড়িয়ে পড়ে সংবাদ মাধ্যমে। ছবি: পিটিআই
সন্ধ্যা নামার পর পরই সংবাদ মাধ্যম আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল ছবিগুলো। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ মুখোশধারী দুষ্কৃতীরা হামলা করেছে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ অন্যান্যদের রক্তাক্ত ছবিও। এক লহমায় জুড়ে যায় দিল্লি থেকে দুর্গাপুর। মুহূর্তেই জেএনইউ ক্যাম্পাসে দলা পাকানো উদ্বেগ আর আশঙ্কার তরঙ্গটা গিয়ে ধাক্কা মারে শিল্পনগরীর ডিটিপিএল কলোনির বাসিন্দা ঐশীর পরিবারেও।
রবিবার রাত পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে উঠতে পারেননি ঐশীর মা শর্মিষ্ঠা দেবী। সংবাদ মাধ্যমে মেয়ের রক্তাক্ত ছবিটা বিঁধেছিল তাঁর বুকে। আতঙ্ক চেপেই শর্মিষ্ঠাদেবী বলছেন, ‘‘অনেকগুলো সেলাই পড়েছে। ঐশীরা ওদের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করছিল। সেই সময়েই মেয়ে আর ওর সঙ্গীদের উপরে রড নিয়ে হামলা চালানো হয়। মেয়েকে দেখে উদ্বেগে রয়েছি।’’
রবিবার রাত পর্যন্ত শর্মিষ্ঠাদেবী পাঁচটি সেলাইয়ের কথা জানলেও, ঐশীর মাথার ক্ষত যে আরও গুরুতর তা শুনিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরাই। শেষ পর্যন্ত তাঁর মাথায় ১৬টি সেলাই করতে হয়েছে। তবে, এমন ভয়ঙ্কর আক্রমণের পরেও সাহস হারাচ্ছে না দুর্গাপুরের ঘোষ পরিবার। দুর্গাপুরের মায়াবাজার এলাকার ডিভিসি আবাসনে থাকেন ঐশী ঘোষের দিদিমা শান্তি সিংহ। ওই হামলায় ভয় তো দূর অস্ত, বরং দুর্গাপুর থেকেই নাতনিকে সাহস জোগাচ্ছেন তিনি। তিনি বলছেন, ‘‘আমার নাতনির মনোভাব অত্যন্ত দৃঢ়। মার খেলেও ও লড়াই চালিয়ে যাবে। এই লড়াই থেকে ওকে ফিরিয়ে আনার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই। ওর লড়াই ওকেই লড়তে হবে। আর আমরা জানি যে ও সফল হবেই।’’
শান্তিদেবীর কথার অনুরণন শোনা গিয়েছে ঐশীর বাবা দেবাশিস ঘোষের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দুর্বল নই। ওদের লড়াই ওরাই লড়তে সক্ষম।’’ তবে একই সঙ্গে সমাজের সর্বস্তরে বিপদের কথাও শুনিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আজ আমার মেয়ে আক্রান্ত হল৷ কাল হয়তো আমি হব৷ আসলে দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত টালমাটাল৷ সেই কারণেই আমরা ভয় পাচ্ছি৷ আমার মেয়ের মাথায় ষোলোটি সেলাই হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এখনও ওর সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি।’’
রবিবার জেএনইউ-তে যে কাণ্ড ঘটেছে তাতে যে কোনও পড়ুয়ার পরিবারেরই আতঙ্কিত হওয়ার কথা। কিন্তু, ঐশীর পরিবার যেন সেই ধাতুতেই গড়া নয়। বরং, উল্টো পথে হেঁটেই ঐশীর লড়াইয়ের ‘পাওয়ার হাউস’ হয়ে উঠেছে তাঁর পরিবার।