গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
দেশীয় প্রযুক্তিতে রকেট প্রপেলড গান (আরপিজি) তৈরি করে পরীক্ষামূলক ভাবে তা ব্যাবহারও করেছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গিরা। শীর্ষ জেএমবি নেতা কওসর ওরফে জহিদুল ইসলামকে জেরা করেই পাওয়া গিয়েছে ওই তথ্য। ওই রকেট দিয়ে এ রাজ্যেই বড় হামলার ছক করেছিল কওসর এবং তার সঙ্গীরা। টার্গেট ছিল উত্তর বাংলা এবং সিকিমের কয়েকটি বৌদ্ধ গুম্ফা। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ) সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
গত বছরের অগস্টে বেঙ্গালুরু থেকে এনআইএ-র গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেন বর্ধমান বিস্ফোরণ এবং বোধগয়া হামলার অন্যতম প্রধান চক্রী কওসরকে। ধরা পড়ার প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় পরে কওসরের কাছ থেকে আরপিজি বানানোর তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কওসরের বেশ কয়েক জন সঙ্গী। তারা কওসর গ্রেফতার হওয়ার পর জেএমবি-র ভারত শাখার সংগঠন আরও শক্তিশালী করছিল। বীরভূমের ইজাজ এবং বাকিদের জেরা করে কওসর সম্পর্কে উঠে আসে নতুন বেশ কিছু তথ্য। নতুন সূত্র পাওয়ার পরেই ফের কওসরকে জেরা করেন গোয়েন্দারা। সেখান থেকেই জানা যায়, ২০১৭ সালের জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে কর্নাটক-তামিলনাড়ু সীমানায় কৃষ্ণগিরির পাহাড় জঙ্গলে ঘাঁটি তৈরি করেছিল কওসর। সেখানেই পরীক্ষা করা হয় তিনটি আরপিজি শেলের।
আরও পড়ুন: মূর্তিভাঙা, ভাষা, এনআরসি: বিদ্যাসাগরের ভিটেয় দাঁড়িয়ে বিজেপিকে ‘ত্রিশূলে’ বিঁধলেন মমতা
এনআইএ সূত্রে খবর, কওসরকে জেরা করে ওই জায়গা থেকে ‘টেস্ট ফায়ার’ করা রকেটের অংশ এবং রকেট লঞ্চারটিও উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। সেই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে আটটি দেড় ভোল্টের ব্যাটারি, ইলেকট্রিক তার এবং বিস্ফোরক। ওই টেস্ট ফায়ারের সময় তার সঙ্গে ছিল সংগঠনের বাংলাদেশি দুই সদস্য হাবিবুর রহমান এবং আরিফ। ছিল ফাহিম নামে অন্য এক সদস্যও। এনআইএ-র গোয়েন্দাদের দাবি, কওসর স্বীকার করেছে, তারা সফল হয়েছিল ওই টেস্ট ফায়ারে।
খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরই গা ঢাকা দিয়ে দক্ষিণ ভারতে আশ্রয় নেয় কওসর এবং তার সঙ্গীরা। এনআইএ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। সেখানে একের পর এক ডেরা বদলাতে থাকে সে। আতিবেলে, কাদুগোড়ি, কেআর পুরম, চিকবানাভারা, শিকারিপালয়া এবং বেঙ্গালুরু ইলেকট্রনিক সিটির এ রকম একাধিক ডেরার হদিশ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। শেষের ওই ডেরা থেকে তারা আইইডি তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামও উদ্ধার করেছেন। তার সঙ্গে মিলেছে বাংলায় লেখা একটি চিঠি এবং একটি ডিজিটাল ক্যামেরাও।
বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তের সময়তেই এনআইএ গোয়েন্দারা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে প্রথম জানতে পেরেছিলেন যে, জেএমবি রকেট বানানোর চেষ্টা করছে। বেলডাঙা বাজারের বোরখাঘর-এ তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছিল রকেট তৈরির কিছু নক্শা আঁকা কাগজপত্র। কিন্তু সেই সময় ধৃত জেএমবি সদস্যরা দাবি করেছিল যে রকেট তৈরির পরিকল্পনা তাদের ছিল কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
আরও পড়ুন: পুজোবাজারে ঘন মেঘ, কলকাতা আর আশপাশে জোর বৃষ্টি হবে দু’দিন
কওসরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে পরিষ্কার যে, বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ মডিউল প্রকাশ্যে চলে আসার পরেও রকেট তৈরির চেষ্টায় বিরতি দেয়নি কওসররা। তারা বেঙ্গালুরুর ডেরাতে বসেই সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে এবং সাফল্য পেয়েছে। গোটা ঘটনা কার্যত হিমস্রোত বইয়ে দিয়েছে গোয়েন্দাদের মেরুদণ্ডে।
এনআইএ-র এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘জইশ বা হরকত উল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠন সরাসরি পাক সেনা বাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র পায়। উত্তর পূর্ব ভারতের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন ছাড়া কোনও সংগঠনের হাতে আরপিজি নেই। মাওবাদীরা এক সময়ে এলটিটিই-র কাছ থেকে শিখে দেশীয় পদ্ধতিতে আরপিজি বানানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা খুব একটা কার্যকরী হয়নি।” সেই দিক থেকে জেএমবি-র হাতে ওই প্রযুক্তি থাকা মানে বড় বিপদ বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: তেলই পুড়ছে সিবিআইয়ের, সাঁতরাগাছি থেকে মেচেদা ঘুরে রাজীব সেই অধরা
এনআইএ-র এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘২০১৭ সালে তারা সফল হয়েছিল। তার পর কওসর ধরা পড়েছে ২০১৮ সালে। টেস্ট ফায়ারের প্রায় দু’বছর পর গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এর থেকে স্পষ্ট যে ইতিমধ্যেই সংগঠনের অন্যদের কাছেও ওই প্রযুক্তি পৌঁছে গিয়েছে যারা এখনও ধরা পড়েনি।” ফলে জেএমবি যে কোনও সময়ে বড় নাশকতা ঘটাতে পারে বলেই আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।