দারিদ্রকে হারিয়ে জয়ী আইএএস জিতিন

হরিয়ানার গুরুগ্রামে জিতিন যাদবের বাড়ি। তাঁর বাবা সুরেশকুমার যাদব ১৯৯১ সালে মারা যান। সেই সময় তাঁর বয়স তিন বছর। তাঁরা দুই ভাই। দাদা নীতেনের বয়স তখন পাঁচ বছর।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৫
Share:

সফল: জিতিন যাদব। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির কেউ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোয়নি। সংসারের টানাপোড়েনে সেই সুযোগও ছিল না। ছোট্ট দোকানের উপরেই ভরসা করে চলত সংসার। বাবার মৃত্যুর পরে এমনও দিন গিয়েছে, ঘরে খাবারের টানাটানি পড়ে যায়। তবুও হার মানেননি জিতিন। বইয়ের মধ্যেই বুঁদ হয়ে ছিলেন তিনি। দেশ ও সমাজের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ তাঁকে তাড়া করে বেড়াত। বছর তিরিশের সেই জিতিন যাদব এখন আইএএস। কোচবিহারের মাথাভাঙার মহকুমাশাসক হিসেবে সদ্য কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। চোখে-মুখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে তিনি বলেন, “আমি এই অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিয়ে একটা দিশা দেখাতে চাই। কী ভাবে স্বপ্ন দেখা শিখতে হয়, আর কী ভাবে তা ছুঁতে হয়, সেটা আমি বলতে চাই সবার সামনে।”

Advertisement

হরিয়ানার গুরুগ্রামে জিতিন যাদবের বাড়ি। তাঁর বাবা সুরেশকুমার যাদব ১৯৯১ সালে মারা যান। সেই সময় তাঁর বয়স তিন বছর। তাঁরা দুই ভাই। দাদা নীতেনের বয়স তখন পাঁচ বছর। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে কার্যত দিশেহারা হয়ে পরেন কান্তাদেবী। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। আত্মীয়-পরিজনদের সহযোগিতায় দুই সন্তানকেই বড় করে তুলতে শুরু করেন। স্কুলের পড়তে পড়তেই জিতিনের দাদা ব্যবসার কাজে মন দেন। আসলে সংসার টানতে সেই কিশোর বয়সেই দোকানে বসতে হয় তাঁকে। দাদার কাজে সহযোগিতা করতেন জিতিনও। মা ও দাদা অবশ্য চেয়েছিলেন জিতিন পড়াশোনা করুক। সেই সঙ্গে তাঁর বইয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার অভ্যেস তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়। দিল্লির একটি কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে চাকরির খোঁজ শুরু করেন জিতিন। শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থায় চাকরিও পেয়ে যান তিনি। সেখানে টাকার অভাব ছিল না।

কিন্তু এইটুকুতে আটকে থাকার মানুষ নন জিতিন। এক বছরের মাথায় সেই টাকার হাতছানি আর ভাল লাগেনি তাঁর। তাঁর কথায়, “যা রোজগার করেছি, তাতে অভাব ঘুচে গিয়েছিল। কিন্তু কেমন জানি দমবন্ধ হয়ে আসছিল। আমি দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার কথা ভাবছিলাম।” তাঁর ওই চিন্তার সঙ্গেই ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁর বন্ধুরাও পাশে দাঁড়ান। তাঁদের সবার পরামর্শেই ‘ইউপিএসসি’ পরীক্ষার লক্ষ্যে শুরু করেন পড়াশোনা। এর পরে ২০১৬ সালে তিনি ‘আইএএস’। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত জেলা কোচবিহারের মাথাভাঙায় এই প্রথম কোনও আইএএস অফিসারকে এসডিও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হল। দু’বছর প্রশিক্ষণে থাকার পরে তিন মাস দিল্লিতে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরতও ছিলেন জিতিন।

Advertisement

প্রশাসনের উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে চাকরিপ্রার্থী তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে ক্লাস নিয়েছেন জিতিন। তিনি বলেন, “এই জেলায় অনেক স্নাতক, স্নাতকোত্তর রয়েছেন। কিন্তু তার পরে তাঁরা দিশেহারা। এটা কাটাতে হবে।”

কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “জিতিনের জীবন শুনে গর্ববোধ করি। ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কথায় উদ্দীপ্ত হবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement