দলুয়াখাকি গ্রামে ছাদপোড়া বাড়ি। —ফাইল চিত্র।
জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুনে সাত-আট জন জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছিলেন বারুইপুরের পুলিশ সুপার। কিন্তু ঘটনার পরে ছ’দিন কেটে গেলেও গ্রেফতার হয়েছে মাত্র তিন জন।
শুক্রবার রাতে জয়নগর থানার আইসি-র বদলির নির্দেশ জারি হয়। রাকেশ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় পার্থসারথি পালকে। বারুইপুর পুলিশ জেলায় ডিআইবি পদে ছিলেন পার্থসারথি। শনিবার সকালে থানায় এসে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। পুলিশ আধিকারিককে বদলি করে তদন্তে গতি আসবে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। পার্থসারথি বলেন, “তদন্ত চলছে। সুপার, অতিরিক্ত সুপার-সহ বারুইপুর পুলিশ জেলার টিম তদন্ত চালাচ্ছেন। আমিও দ্রুত বিষয়টি বুঝে নিচ্ছি।”
সইফুদ্দিনের বাবা ইলিয়াস লস্কর বলেন, “পুলিশের উপরে আস্থা আছে। কয়েক জনকে ধরেছে। বাকিদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।” এ দিকে, ধৃত আনিসুর রহমান লস্করের মা আবেদা বেওয়া ছেলেকে নির্দোষ বলে ফের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।”
ইতিমধ্যে এই ঘটনায় নানা তথ্য সামনে এসেছে। সূত্রের খবর, সইফুদ্দিনের ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় খুনের পরিকল্পনা করে। এলাকার আরও এক ব্যবসায়ীর নামও শোনা যাচ্ছে। সেই ব্যবসায়ীও সইফুদ্দিন খুনে টাকা দেয় বলে খবর। নাসির ও ‘বড় ভাই’ নামে দু’জনের কথা উঠে এলেও তাদের খোঁজ পায়নি পুলিশ। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে এ দিনও মুখ খুলতে চাননি পুলিশ কর্তারা।
সূত্রের খবর, সইফুদ্দিনের উপরে হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল জয়নগর থানাকে। তার পরেও সতর্ক হয়নি স্থানীয় পুলিশ। বারুইপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দারেরও দাবি, সইফুদ্দিনের নিরাপত্তার কথা আগেই জানানো হয়েছিল থানাকে।
সইফুদ্দিন খুনের পরে হামলা হয়েছিল আনিসুর-সহ দলুয়াখাকি গ্রামের কয়েক জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে। এ প্রসঙ্গে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শনিবার কাঁথিতে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্ত করবেই না। সে জন্য আদালতে যেতে হবে। আমি সিপিএম কর্মীদের বলব, আগে আপনারা সীতারাম চুরির (ইয়েচুরির) বাড়িতে ধর্না দিন।’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী পাল্টা বলেন, ‘‘সিপিএম কর্মীদের কী করতে হবে, সেটা তাঁরা ভাল ভাবেই জানেন। সে ব্যাপারে ওঁর পরামর্শের দরকার নেই। উনি বরং সিবিআইকে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে দেওয়ার দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ধর্না দিন। নিজেদের নেতা-কর্মীরা কী ভাবে তৃণমূলে মিশে যাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখুন।’’
সিবিআই তদন্ত নিয়ে শুভেন্দুর কটাক্ষের জবাবে বারুইপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক বিভাস সর্দার বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত আনিসুর গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের তদন্তে আমাদের আস্থা আছে। আর কেউ যুক্ত থাকলেও দ্রুত ধরা পড়বে। পুলিশকে বলেছি, দল না দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।