—ফাইল চিত্র।
শুধু বাংলা বা ভারতই নয়, সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শের প্রেরণায় নতুন করে যেন বাঁধা পড়ল জাপান ও পড়শি দেশ বাংলাদেশ। রবিবার নেতাজি ভবনে সুভাষের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর উদ্যাপন অনুষ্ঠান বহন করল তারই সাক্ষ্য।
কোভিড-আবহে অন্য ২৩ জানুয়ারির তুলনায় সীমিত লোকসমাগম ছিল এ দিন। তবু সুভাষচন্দ্রের লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক মহিমা উঠে এসেছে নেতাজি রিসার্চ বুরো আয়োজিত অনুষ্ঠানে। জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে এ বার ‘নেতাজি পুরস্কার’ দিয়েছে বুরো। এ বছরই ভারত ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর। নেতাজি রিসার্চ বুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসুর কথায়, “জাপানে সব থেকে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী, বরাবরের ভারতবন্ধু এবং নেতাজি অনুরাগী হিসেবেই শিনজো আবের কথা ভাবা হয়েছে।” শিনজো আবের লিখিত বার্তাটি পড়েন কলকাতায় জাপানের কনসাল জেনারেল নাকামুরা ইয়ুতাকা। তাতে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরে এসে কৃষ্ণা বসুর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কলকাতার নেতাজি ভবন ও সংগ্রহালয় দেখার স্মৃতি আমার ভালই মনে রয়েছে। নেতাজি মানে ভারত ও জাপানের মানুষের হৃদয়ের যোগ। আমি নিশ্চিত, আগামী দিনেও আমাদের দু’দেশ একযোগে বিশ্বের সার্বিক কল্যাণ সাধনায় ব্রতী থাকবে।” দিল্লি থেকে ভিডিয়ো বার্তায় জাপানের রাষ্ট্রদূত সুজুকি সাতুসু বলেন, “ভারতের স্বাধীনতার আগেই নেতাজি ভাষা, ধর্মের ঊর্ধ্বে দেশবাসীকে মিলিয়েছিলেন। আমার মতো বহু জাপানি তাঁর আদর্শে মুগ্ধ।”
জাপান ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পথচলা যে সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের হাত ধরেই শুরু হয়, তা বলেছেন ইতিহাসবিদ তথা নেতাজি রিসার্চ বুরোর চেয়ারপার্সন সুগত বসু। তিনি বলেন, ‘‘জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো থেকে প্রবীণ কবি নোগুচি সুভাষচন্দ্রের জাদুতে আলোড়িত হয়েছিলেন।’’ সুভাষের ভাইপো শিশিরকুমার বসুর পুত্র সুগত ‘জাপানে নেতাজির প্রেরণা’-বিষয়ক বক্তৃতায় নিজের দশ বছর বয়সের একটি বিশেষ স্মৃতিতে উদ্বেল হন। ১৯৬৭ সালে সে-দিন জাপানে সুভাষের সহযোগী জেনারেল ফুজিওয়ারা ইওয়াইচি ‘নেতাজির তরবারি’ কলকাতায় নিয়ে আসেন। শিশির বসু তখন ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে জাপানের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই ‘নেতাজি-তরবারি’ ট্রেনে দিল্লির লাল কেল্লা নিয়ে যাওয়ার সময়েও স্টেশনে স্টেশনে উন্মাদনার সাক্ষী বালক সুগত। তিনি জানান, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, “নেতাজি নিজে দিল্লি আসতে না-পারলেও তাঁর তরবারি এসে পৌঁছেছে। আমরা যারা তাঁকে দেখেছি, বুঝতে পারি, আজাদ হিন্দ ফৌজের সহযোদ্ধাদের তিনি কতটা উজ্জীবিত করেছিলেন।”
৫০ বছর আগে এ দিনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের বার্তা শোনানো হয় নেতাজি-ভবনে। মুক্তিযুদ্ধে এই বাড়িটিও বাংলাদেশের জন্য নানা কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠে। এ দিন ফের বঙ্গবন্ধুর মন্দ্র স্বরে শোনানো হয়, ‘‘নেতাজির ত্যাগ ও তিতিক্ষার আদর্শ চিরকালের জন্য সারা বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের চলার পথে পাথেয়!’’