সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ধর্মতলায়। ছবি: পিটিআই।
সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে চলতি বিতর্কের মধ্যেই এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সুভাষ সম্পর্কিত যাবতীয় সরকারি নথি প্রকাশ্যে আনার দাবিতে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গেই জাপানের রেনকোজি মন্দিরে রাখা চিতাভস্ম হিসাবে যা রক্ষিত আছে তার ডিএনএ পরীক্ষার দাবিও ইতিমধ্যেই তুলেছে মমতার দল।
সুভাষের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিতর্ক ঘিরে উত্তাপ বাড়ছেই। প্রজাতন্ত্র দিবসে সুভাষকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যাবলোর প্রস্তাব বাতিল হওয়ায় এই বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। রবিবার কলকাতায় সুভাষের জন্মদিনের সরকারি অনুষ্ঠানে তাতে নতুন মাত্রা যোগ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারের কাছে নেতাজি সম্পর্কিত যা তথ্য ছিল সেই সব নথি প্রকাশ করেছি। অথচ ক্ষমতায় আসার আগে এই সরকার ( বিজেপি) নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচনের কথা বললেও কিছুই করেনি।’’
দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটে সুভাষ-মূর্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এ দিন সুভাষের ভাবনা প্রসূত ‘যোজনা কমিশন’-এর অবলুপ্তির প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে এই রকম যোজনা কমিশন তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যোজনা কমিশন সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু এই সরকার ক্ষমতায় এসে তা তুলে দিয়েছে। যাঁরা তুলে দিয়েছেন, তাঁদের (কেন্দ্রীয় সরকার) শুধুই ধিক্কার জানাচ্ছি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘দিল্লিতে তাঁর জায়গা না-ই বা হল, বাংলায় তো জায়গা থাকবেই।’’
শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে দিল্লির ইন্ডিয়া গেট-এ থাকা ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ সরিয়ে সুভাষের মূর্তি বসানো নিয়ে বিতর্কে ইতিমধ্যে রাজনীতির ছোঁয়াও লেগেছে প্রত্যাশিত পথে। রাজ্য সরকারের আয়োজিত এ দিনের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘একটা স্মারক নিয়ে রাজনীতি করছেন। শহিদদের মধ্যে ভাগাভাগি হয় না।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘একটা অমর জ্যোতি নিভিয়ে মূর্তি বসিয়ে সুভাষকে শ্রদ্ধা জানানো যায় না। কেন এত দিন মূর্তি তৈরি হল না? এই মূর্তি তো বসাচ্ছে আমাদের চাপে।’’ মমতার কটাক্ষ, ‘‘আজ কেউ কেউ দেশকে ভাগ করতে হিন্দু-মুসলমান করে বেড়ান। তাঁদের বলব, বিবেকানন্দের কথা, নেতাজির কথা পড়ুন। রবীন্দ্রনাথকে জানুন।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, রাজ্যে সুভাষের নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে। চুঁচুড়ায় স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি হবে। স্কুলে এনসিসি বাহিনীর মতো ‘জয়হিন্দ বাহিনী’ গড়া হবে বলেও জানান। ২৩ থেকে ৩০ জানুয়ারি, ১৫ থেকে ২১ অগস্ট সারা রাজ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তিতে বিশেষ সাজসজ্জার উদ্যাপন করা হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে তাম্রলিপ্ত সরকারের কথা মাথায় রেখে সেখানেও অনুষ্ঠান করা হবে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাজারহাটে নেতাজির একটি মূর্তি প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তাঁর নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবেন। কিন্তু এক বছর পরেও সেই মূর্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেও পাওয়া যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আর আমরা প্রতিশ্রুতি না দিয়েই কাজ করে চলেছি।’’ একই অভিযোগ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীরও।