গত বছর আর্থিক কারণে ব্লকস্তরীয় জঙ্গলমহল উৎসব বাতিল হয়। —ফাইল চিত্র।
ন’বছর পর ছেদ পড়তে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের জঙ্গলমহল উৎসবে। আগে রাজ্যস্তরীয় অনুষ্ঠান হত ঝাড়গ্রামে। গত দু’বছর ধরে তা বন্ধ হয়ে শুরু হয়েছিল জেলাভিত্তিক অনুষ্ঠান। গত বছর আর্থিক কারণে ব্লকস্তরীয় জঙ্গলমহল উৎসব বাতিল হয়। এবার জেলাভিত্তিক অনুষ্ঠানও পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, শীর্ষ মহল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবার জঙ্গলমহল উৎসব হচ্ছে না। লোকসভা ভোটের আগে এমন খবরে চর্চা শুরু হয়েছে নানা মহলে। শিল্পী মহলে তৈরি হয়েছে হতাশা। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতর ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে জঙ্গলমহল উৎসবের রাজ্যস্তরীয় অনুষ্ঠান ঝাড়গ্রামে হত। উদ্বোধন করতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোটি কোটি টাকা খরচ হত। বিলি করা হত ধামসা-মাদল। করোনা কালেও ছেদ পড়েনি তাতে। ২০২১ সালে জানুয়ারি করোনার সময়েও আটদিন ধরে জঙ্গলমহল উৎসব হয়েছিল আট দিন ধরে। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসে এই উৎসব নিয়ে জল হাই কোর্টে পর্যন্ত গড়িয়েছিল। করোনা আবহে ঝাড়গ্রাম শহরে জঙ্গলমহল উৎসব হওয়ায় জনস্বার্থ মামলা করেছিল বাম যুব নেতা প্রতীক মৈত্র। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি তখন জানিয়েছিলেন, উৎসব করার পরিস্থিতি রয়েছে কি না তার সিদ্ধান্ত জেলাশাসককে নিতে হবে। জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, করোনা বিধি মেনে জঙ্গলমহল উৎসব হবে। সে বছর থেকে রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়। ঠিক হয়, জঙ্গলমহলের প্রতি জেলায় আলাদা করে এই উৎসব হবে। ব্লক ভিত্তিক উৎসবও থাকবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতেও জঙ্গলমহল উৎসব হয়েছিল। তবে খরচ এক ধাক্কায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্লক স্তরের অনুষ্ঠানও বাতিল হয়ে যায়। এবার ঝাড়গ্রাম জেলায় জঙ্গলমহল উৎসবের জন্য ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি তিনদিন ধরে উৎসব হয়েছিল। ছোট মঞ্চ হয়েছিল। আলোকসজ্জা আগের মত ছিল না। জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিরা গান করেছিলেন। এবার জঙ্গলমহলের কোনও জেলাতেই আর এই উৎসব হবে না।
করোনা আবহে যে উৎসবের জন্য আদালতেও লড়েছিল প্রশাসন, এখন স্বাভাবিক সময়ে তা কেন বন্ধ করা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তবে জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, আর্থিক কারণেই এই সিদ্ধান্ত। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা বন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলছেন, ‘‘এবার জঙ্গলমহল উৎসব হচ্ছে না। কারণ জানি না। শীর্ষ মহল থেকে উৎসব হবে না বলে জানানো হয়েছে।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম পর্যবেক্ষক সুজিত অগস্তীর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের সরকার গরিব মানুষের জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা নয়ছয় করেছে। এখন ভাঁড়ারে টান পড়ায় মেলা-খেলা বন্ধ হচ্ছে।’’
এই খবরে হতাশা তৈরি হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলার শিল্পী মহলে। লোকশিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতোর কথায়, ‘‘জঙ্গলমহলের শিল্পীদের কাছে এটা খুবই খারাপ খবর। সব শিল্পী বড় জায়গায় সুযোগ পায় না। তাই জঙ্গলমহল উৎসবকে এখানকার শিল্পীরা বড় মঞ্চ মনে করে। সবাই এই উৎসবের জন্য সারা বছর আশা করে থাকে।’’ জেলার আরেক লোক শিল্পী বলছেন, ‘জঙ্গলমহলের লুপ্তপ্রায় লোকশিল্পী ও হস্ত শিল্প তুলে ধরার জন্য যে উৎসব চালু হয়েছিল তা বন্ধ হলে শিল্পীরা তো হতাশ হবেনই।’’