কাছারিবাড়ি এলাকার কালী মন্দির। আউশগ্রামের সোমাইপুরে। নিজস্ব চিত্র।
জমিদারের কর্মচারীর হাতে পরিবারের সদস্যের অপমানের প্রতিবাদ জানাতে গ্রামে কালীপুজো শুরু করেছিলেন জনাব শেখ। কয়েকশো বছর আগে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সোমাইপুরে কাছারিবাড়ি এলাকায় শুরু হওয়া সে পুজো এখন সর্বজনীনের চেহারা নিয়েছে। পাকা মন্দির তৈরি করে পুজো হয় ‘ষোড়শী কালী’র।
কথিত রয়েছে, কয়েকশো বছর আগে বোলপুরের রায়পুরের জমিদারের অধীনে ছিল এই গ্রামটি। সেখানে বাস ছিল জনাব শেখের পরিবারের। বাড়ির এক সদস্য হোসেন ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। কোনও এক বছর জনাব হজে যান। তখনই কাছারিবাড়ি থেকে গ্রামে কর আদায়ে আসেন জমিদারের কর্মচারী। কর না পেয়ে লেঠেল বাহিনী পাঠিয়ে হোসেনকে কাছারিতে নিয়ে গিয়ে বেঁধে রাখেন তিনি। গ্রামে ফিরে সে কথা শুনে জনাব ছুটে যান কাছারিবাড়িতে। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কালীপুজো করার কথা ঘোষণা করেন। জানা যায়, এর পরেই কাছারিবাড়ির কাছে অমাবস্যা তিথিতে কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা হয়। জনাবের উদ্যোগে শুরু হয় পুজো।
শেখ পরিবারের বর্তমান সদস্য নুর নবী শেখ বলেন, “কাছারিবাড়ির কাছে যে কালীপুজো হয়, তার সূচনা হয়েছিল আমাদের পরিবারের হাত ধরে। বাড়ির সদস্যের অপমানের প্রতিবাদে জনাব শেখ প্রতিমা তৈরি করিয়েছিলেন। পুজোর সমস্ত খরচও বহন করেছিলেন তিনি। তবে পুজো করেছিলেন গ্রামের হিন্দু বাসিন্দারাই।” পুজো পরিচালন কমিটির কর্তা বীরেন্দ্রনাথ কোনারও বলেন, “গ্রামের সংখ্যালঘু পরিবার কালীপুজোয় উদ্যোগী হয়েছিল। তবে পুজো করেন হিন্দুরাই। পুজোর খরচ চালানোর জন্য পরে জমিদারের তরফে বেশ কিছু জমি দান করা হয়।”
কাছারিবাড়ির কাছেই সে জায়গায় কালী মন্দির তৈরি করেছেন বাসিন্দারা। পুজোর দিন সেখানে পঙ্ক্তিভোজ হয়। গ্রামবাসী অসীম কোনার, হারাধন ঘোষ, ভুবন চট্টোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘শোনা যায়, সে সময়ে এলাকায় কোনও কালীপুজো হত না। শেখ পরিবারেরে উদ্যোগে শুরু হওয়া পুজোটিই সর্বজনীন হয়ে ওঠে।’’ গ্রামের বাসিন্দা মিন্টু শেখের কথায়, ‘‘এক মুসলমান পরিবারের উদ্যোগে শুরু হওয়া পুজো বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে আসছেন হিন্দুরা। এর থেকে বড় সম্প্রীতির নজির কী-ই বা হতে পারে!’’
আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেন, ‘‘গ্রাম বাংলায় এমন নানা সম্প্রীতির নজির ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কোনও অপশক্তি তা মুছে ফেলতে পারবে না।’’