ফাইল চিত্র।
সিবিআই তদন্তের আর্জি মঞ্জুর হয়নি। তবে জলপাইগুড়িতে এক নাবালিকার উপরে যৌন নির্যাতনের মামলায় বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে দু’জন সাক্ষীর সই জালের অভিযোগ। এবং এই অভিযোগ উঠেছে জেলার সেই পুলিশের বিরুদ্ধে, ‘নিষ্ক্রিয়তা’র জন্য যাদের আগেই তোলা হয়েছে কাঠগড়ায়। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে এ দিন ওই দুই সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সই জালের অভিযোগ সামনে রেখে ওই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আর্জি জানান জনস্বার্থ মামলাকারীদের আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। আপাতত সেই আর্জি মঞ্জুর না-হলেও তা খারিজও করা হয়নি।
আদালত এ দিন জানিয়েছে, ওই কিশোরীকে নির্যাতন ও হুমকির অভিযোগ নিয়ে তদন্তের তত্ত্বাবধান করবেন রাজ্য পুলিশের এক জন পদস্থ কর্তা। ওই নাবালিকার পরিবার এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেবে পুলিশই। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১১ মে। সে-দিন সই জালের অভিযোগ সম্পর্কে রাজ্য সরকার তাদের বক্তব্য জানাতে পারে।
অভিযোগ, জলপাইগুড়ির ওই নাবালিকা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তার পরে অভিযুক্তেরা বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেয় এবং সেই ঘটনার পরেই মেয়েটি গায়ে আগুন দেয়। হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পরে তার মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়-সহ বিজেপির লিগ্যাল সেলের কয়েক জন আইনজীবী। কিন্তু এ দিন হাই কোর্টে এসে কিশোরীর বাবা বিচারপতিদের জানান, তিনি সিবিআই তদন্ত চান না। যদিও এর আগে তিনি এবং তাঁর অন্য এক মেয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন। সেই সংক্রান্ত ভিডিয়ো ক্লিপ এ দিন পেন ড্রাইভে কোর্টে জমা দেন মামলাকারীদের আইনজীবী।
সুস্মিতাদেবী এ দিন কোর্টে জানান, দু’জন সাক্ষীকে কার্যত ভুল বুঝিয়ে সই নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সামনে কোনও কিছু বাজেয়াপ্ত না-করলেও পুলিশ ওই দু’জনকে ‘সিজ়ার লিস্ট’-এ সাক্ষী করেছে। অভিযোগ, অন্য একটি ‘সিজ়ার লিস্ট’-এ ওই দু’জনের সই জাল করা হয়েছে। এর সত্যতা বিচার করার জন্য সইয়ের নমুনা কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর আর্জি জানান সুস্মিতাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ওই সই যে জাল, তা খালি চোখে দেখেই বলা সম্ভব। এই ধরনের ত্রুটি থাকলে সেই ফাঁক গলে দোষীরা ছাড়া পেয়ে যেতে পারে।’’
সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, পুলিশ যথাযথ তদন্ত করছে। মামলাকারীদের জমা দেওয়া ভিডিয়ো ক্লিপের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর দাবি, ওই ক্লিপে ‘ডিসকন্টিনিউটি’ (খাপছাড়া রেকর্ডিং) রয়েছে।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে কোর্ট জানায়, আপাতত রাজ্য পুলিশই তদন্ত করবে। তদন্তে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কয়েকটি নাম জমা দেন এজি। এ ব্যাপারে মামলাকারীদের কাছে নাম চাইলে তাঁদের কৌঁসুলি সুস্মিতাদেবী জানান, এই মামলায় রাজ্য পুলিশের উপরে তাঁর বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। তাই তিনি কোনও নাম জমা দেবেন না। কোর্ট যাঁকে মনে করবে, তাঁকে দায়িত্ব দিতে পারে। তবে তিনি কোর্টের কাছে আবেদন জানান, নির্যাতিতার পরিবার এবং সাক্ষীদের কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি ধীরাজ ত্রিবেদী জানান, আদালত নির্দেশ দিলে তাঁরা নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত।
ডিভিশন বেঞ্চ আপাতত কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। প্রধান বিচারপতি জানান, যদি রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে নির্যাতিতার পরিবার বা সাক্ষীদের অভিযোগ বা আপত্তি থাকে, তা হলে তাঁরা অথবা মামলাকারীরা সেটা কোর্টে জানাতে পারেন।