ফাইল চিত্র।
কী আর বলব এই অবস্থায়, জানি না। মরেই যেতাম হয়তো। কোনও ক্রমে বেঁচে ফিরেছি। অথচ পুরসভার তরফে বার বার সতর্ক করা হচ্ছিল, নদীতে জল বাড়ছে। উঠে আসতেও বলা হচ্ছিল। কিন্তু কে বুঝবে যে, এমন বানের জল এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সকলকে!
আমি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মালবাজার দফতরে চাকরি করি। অফিসে বড় করে বিশ্বকর্মা পুজো হয়। এই তো সে দিন বিশ্বকর্মা বিসর্জনে এই নদীতেই এসেছিলাম। কোনও অসুবিধাই হয়নি। কিন্তু দশমীতে যা হল, তা কল্পনার বাইরে।
বুধবার একাই বেরিয়েছিলাম বিসর্জন দেখতে। নদীর ঘাটে পৌঁছে আমার পরিচিত অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়ে গেল। এর পরে কথায় কথায় জনস্রোতে কখন মিশে গিয়েছি, খেয়াল ছিল না। তখনই পুরসভার তরফে নদীতে জল বাড়ছে বলে সতর্ক করা শুরু হল। উপরে উঠে আসতেও বলা হচ্ছিল। শুনেও তখন আমরা এর গুরুত্ব বুঝিনি। কারণ, এই মাল নদীর ঘাটেই জীবনে এত প্রতিমা বিসর্জন দেখেছি সামনে থেকে, যে এই বিপর্যয়ের কথা ভাবনাতেও আসেনি।
কিন্তু আচমকাই সব বদলে গেল। আমার চারপাশে জল বাড়ছিল, টের পাচ্ছিলাম। নিজের চোখেও দেখছি। হঠাৎ সব শব্দ ছাপিয়ে যায় জলের স্রোতের শব্দ। মুহূর্তেই উৎসবের বাজনা বদলে গেল আর্তনাদে। চোখের সামনে দেখলাম, নদীর প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছেন অনেকে। বুঝতে পারলাম, চরম বিপদের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। আর বুঝি রক্ষা নেই। চারদিক থেকে শুধু চিৎকার আর আর্তনাদ। দিশাহারা লাগছিল প্রচণ্ড। বিহ্বল অবস্থায় এগোতে এগোতে দেখি, সামনে একটি আর্থমুভার। কয়েক জন আমাকে এবং আরও কয়েক জনকে তুলে নিলেন উপরে। পরে নামানোর সময় ডান হাতে আঘাত পাই।
হাসপাতালে এসে দেখি, চারদিকে স্বজন-হারানোর কান্না। আমার হাত ভেঙেছে বলে দুঃখ নেই। কিন্তু উৎসবের মধ্যে এত লোকের প্রাণ গেল, ভাবতেই শিউরে উঠছি। মাল নদীর এই রূপ আগে কখনও দেখিনি।
(জখম দর্শনার্থী)