ফাইল চিত্র
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, পুলিশের ভূমিকা, করোনা পরিস্থিতি— রাজভবনে বসে যে সব বিষয় নিয়ে প্রায় প্রতিদিন সরব হন, দিল্লি এসে তা নিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে অভিযোগ জানিয়ে গেলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
শাহ-ধনখড়ের আজকের সাক্ষাৎকারকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। ঘটনাচক্রে এ দিনই শাহের সঙ্গে দেখা করেছেন রাজ্যের তিন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, দেবশ্রী চৌধুরী ও রাজু বিস্ত এবং রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। চোপড়ার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করে সরব হয়েছেন তাঁরা। পর্যবেক্ষকদের জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে সন্ধ্যায় শাহের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বৈঠক।। যদিও ধনখড়-শাহ বৈঠকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার কোনও যোগসূত্র আছে, এমন কথা জানায়নি সরকারি কোনও সূত্রই। সরকারি ভাবে একে সৌজন্য সাক্ষাৎই বলা হচ্ছে।
শাহের সঙ্গে ধনখড়ের প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক প্রসঙ্গে কলকাতার রাজভবন থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘রাজ্যপাল আজ অমিত শাহকে জানিয়েছেন, তিনি এক বছর হল পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। সংবিধানের ১৫৯ ধারায় বর্ণিত রাজ্যপালের কর্তব্য মেনেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভাল করার জন্য তিনি শপথ নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সেই অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, শাহের কাছে এ কথা বলার প্রয়োজন হল কেন? রাজভবন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক— কোনও সূত্রেই তার ব্যাখ্যা মেলেনি।
আরও পড়ুন: কিশোরীর পরে চোপড়ায় মিলল কিশোরের দেহ
পরে রাতে টুইট করে ধনখড় জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যপ্রশাসনের ব্যর্থতার যে দিকগুলি তুলে আলোচনা হয়েছে সেগুলি হল, করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়া, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, বিরোধীদের পরিকল্পিত ভাবে নিশানা করা ও আমপান-ত্রাণে প্রবল দুর্নীতি। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজভবন। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের পরিস্থিতি খাদের কিনারায় চলে আসায় রাজ্যপাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে বাধ্য হয়েছেন।
রাজ্যপালের এই অতিসক্রিয়তা শুধু শাসক তৃণমূল নয়, ভাল চোখে দেখছে না বিরোধী সিপিএম-ও। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপালের আসলে বলা উচিত ছিল, তিনি ওই পদের অযোগ্য এবং সংবিধান সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান নেই। তাই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হয়েও তিনি বিরোধীদের কথা প্রচার করে বেড়ান! এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ঠিকই আছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বলতে চাইলে ওঁর দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতের কথা বলা উচিত ছিল। আর এ রাজ্যের কোথাও দুর্নীতি হলে তা রাজ্যপাল বা বিরোধীরা মোকাবিলা করেন না। তা মোকাবিলা করেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। মানুষও তাই তাঁকেই ভরসা করেন।’’ অন্য দিকে সিপিএমের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই তো অভিযুক্ত। তারা কারও বিচার কী ভাবে করবে!
রাজ্যপালের পরে আজ বিকালের শাহের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির বঙ্গ নেতারা। বৈঠকের শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, চোপড়ার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। রাজ্যের ব্যর্থতার বিষয়গুলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে। তবে তিনি পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।