যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই নির্দেশ পেয়ে তদন্ত কমিটি গড়ল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ইউজিসি-র নির্দেশের চিঠি পৌঁছেছে। সেই মতো গত শুক্রবার তদন্ত কমিটি গড়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, র্যাগিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবং এ ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারের মতো শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে। র্যাগিং নিয়ে কোনও ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ইউজিসি-র হেল্পলাইনেও সরাসরি জানানো যায়। যাদবপুর নিয়ে এমনই অভিযোগ পৌঁছেছে ইউজিসি-র কাছে।
এর প্রেক্ষিতেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। গত শুক্রবার উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক ডেকে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়েছেন। শনিবার উপাচার্য বলেন, ‘‘ইউজিসি এই বিষয়ে জানানোর পরে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।’’
শাস্তির বিধান
• ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কার
• ছাত্রবৃত্তি বন্ধ করে দেওয়া
• পরীক্ষায় বসতে না দেওয়া
• ফল প্রকাশ স্থগিত রাখা
• ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা
• চারটি সেমেস্টার পর্যন্ত বহিষ্কার
• অন্য প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হতে না দেওয়া
ঘটনাচক্রে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জলের ট্যাঙ্কের উপর থেকে পড়ে এই মুহূর্তে এক ছাত্র নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। কোনও কোনও মহল থেকে ওই ছাত্র র্যাগিংয়ের শিকার বলে অভিযোগ তোলা হলেও তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের ওই পড়ুয়া শোভনদেব পাল মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়ায় এখনও কথা বলতে পারছেন না। তিনি কী কারণে পড়ে গিয়েছিলেন, তা এখনও জানতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সূত্রের খবর, ইউজিসি-র চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের নির্দিষ্ট দু’টি ঘরে র্যাগিং চলে বলে উল্লেখ রয়েছে। উচ্চশিক্ষার এই কেন্দ্রীয় সংস্থার নির্দেশ মেনে র্যাগিং রুখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে নানা সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। নিয়ম মেনে ভর্তির সময় পড়ুয়া ও অভিভাবকদের র্যাগিং-বিরোধী ফর্মে সইও করতে হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও কেন বারবার র্যাগিংয়ের অভিযোগ সামনে আসছে, উঠছে সেই প্রশ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের এক ছাত্রকে র্যাগিংয়ের দায়ে তিন ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের শাস্তি মকুবের দাবিতে ছাত্রদের একাংশ প্রায় দু’দিন তৎকালীন উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্যকে ঘেরাও করে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ওই তিন ছাত্রের কোনও শাস্তি হয়নি। ২০১৫ সালেও হস্টেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল।
বছর না ঘুরতেই ফের ছাত্রাবাসে উঠল র্যাগিংয়ের অভিযোগ।