ঘটনাচক্রে, রবিবার ক্যান্টিনের ৭৩০তম দিনে এক দম্পতি এসেছিলেন। যাঁদের বর্তমান ঠিকানা আমেরিকার ডালাসে। ত্রিদিব ও প্রত্যুষা নামে ওই দম্পতি শনিবারই শ্রমজীবী ক্যান্টিনের জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। এ ভাবেই কারও জন্মদিন, কারও বা বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয় এই শ্রমজীবী ক্যান্টিনে। সে সব উপলক্ষেও অর্থের যোগান হয়ে যায় বলেই জানাচ্ছেন শ্রমজীবী ক্যান্টিনের উদ্যোক্তারা।
রবিবার যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে হাজির সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। ছবি: ফেসবুক।
রবিবার দু’বছর পূর্ণ করল সিপিএমের শ্রমজীবী ক্যান্টিন। আর সেই দিনই এই ক্যান্টিনকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার সঙ্কল্পও করলেন যাদবপুর এলাকার সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। ২০২০-র মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে দেশ জুড়ে যখন লকডাউন শুরু হয়, তখন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের কথা মাথায় রেখে সিপিএমের যাদবপুরের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে শুরু হয় এই শ্রমজীবী ক্যান্টিন। অল্প দিনেই এই উদ্যোগে জনমানসে সাড়া পান স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। তার ফলে লকডাউন পর্ব কেটে গেলেও শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালানোর সিদ্ধান্ত নেন যাদবপুর এলাকার সিপিএমের সদস্য-সমর্থকরা। রবিবার শ্রমজীবী ক্যান্টিনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি পালিত হল। শ্রমজীবী ক্যান্টিনের সঙ্গে যুক্ত সিপিএমের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত দু’বছরে এই কাজে তাঁদের খরচ হয়েছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা।
কিন্তু এ বারের কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্মেলনে প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়েছিল জ্যোতি দেবী শ্রমজীবী ক্যান্টিনকে। কলকাতা জেলা সিপিএমের দক্ষিণ কলকাতার বেশ কয়েকটি এরিয়া কমিটি এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। মূলত প্রশ্ন তোলা হয়, কী ভাবে এত দিন শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালানো হচ্ছে? ক্যান্টিন চালানোর অর্থই বা আসছে কোথা থেকে? সেই সঙ্গে এ কথাও ওঠে যে, সিপিএমের রাজনীতির সঙ্গে শ্রমজীবী ক্যান্টিনের কর্মসূচির কী কোনও সম্পর্ক রয়েছে? আদৌ দল কি এই ধরনের পৃথক কর্মসূচিকে মান্যতা দেয়? সম্মেলনের শেষ দিনে এই সব প্রশ্নের উত্তরে শ্রমজীবী ক্যান্টিন কী ভাবে পরিচালিত হচ্ছে, কোথা থেকে এই ক্যান্টিন চালানোর অর্থ আসছে ইত্যাদি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার। সমালোচক শিবির যখন দলীয় কর্মীদের এই উদ্যোগকে 'স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজ' বলে উল্লেখ করেছিলেন, তখন তার জবাবে কল্লোল এই ক্যান্টিনকে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার এক পন্থা বলে অভিহিত করেছিলেন।
শ্রমজীবী ক্যান্টিনের হিসেব এবং অর্থের উৎস নিয়েই মূলত প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ক্যান্টিনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে বিতর্কিত কোনও কথা বলতে চাননি সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা শ্রমজীবী ক্যান্টিনের অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালাতে প্রথম থেকেই আমরা দলের কাছে অর্থ চাইনি। পার্টি কর্মী বা পার্টি-দরদিদের সাহায্যেই এই ক্যান্টিন চালিয়েছি। প্রতিদিন ৬০-৬৫ জনকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়। বাকি ৬০০-৭০০ জনের থেকে খাবার বাবদ ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। এ ভাবেই আমরা অর্থ সংগ্রহ করে কঠিন পথ চলেছি। কিন্তু এখন চাইছি এই ক্যান্টিনকে স্থায়ী রূপ দিতে।’’
ঘটনাচক্রে, রবিবার ক্যান্টিনের ৭৩০তম দিনে এক দম্পতি এসেছিলেন। যাঁদের বর্তমান ঠিকানা আমেরিকার ডালাসে। ত্রিদিব ও প্রত্যুষা নামে ওই দম্পতি শনিবারই শ্রমজীবী ক্যান্টিনের জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। এ ভাবেই কারও জন্মদিন, কারও বা বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয় এই শ্রমজীবী ক্যান্টিনে। সে সব উপলক্ষেও অর্থের যোগান হয়ে যায় বলেই জানাচ্ছেন শ্রমজীবী ক্যান্টিনের উদ্যোক্তারা।
শ্রমজীবী ক্যান্টিনের সাফল্য উপলক্ষে বিজয়গড়ের নিরঞ্জন সদন থেকে শ্রমজীবী ক্যান্টিন পর্যন্ত একটি মিছিল হয়। কর্মীদের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়াতে হাজির হয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ প্রমুখ।