Nawsad Siddique

গাড়িতে ঠায় বসে থেকেও ভাঙড়ে ঢুকতে পারলেন না নওশাদ! পুলিশি বাধায় ফিরলেন নিউটাউন থেকেই

একটা সময়ে পুলিশ আধিকারিকের দিকে নিজের বিধায়ক-পরিচয়পত্র এগিয়ে দিয়ে নওশাদ বলেন, ‘‘দেখুন তখন আমরা মুখটা কালো ছিল। এখন একটু ফর্সা হয়েছি। এটুকুই তফাৎ। এই আমার আইডি কার্ড।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ২২:০২
Share:

ভাঙড় যাওয়ার পথে নওশাদকে বাধা। গাড়িতে বসে বিধায়ক। —নিজস্ব চিত্র।

নিউটাউনের হাতিশালার কাছে পুলিশের বাধা পেয়ে গাড়ি থামিয়েছিলেন। তখন সকাল প্রায় ১০টা। পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি, কথা কাটাকাটি হয়েছিল। কোনও কাজ হল না। প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা ঠায় গাড়িতে বসে থেকেও কাজ হয়নি। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভাঙড়ে ঢুকতে পারলেন না আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা নাগাদ গাড়ি ঘুরিয়ে নেন আইএসএফ বিধায়ক।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটের পর নাগাড়ে গন্ডগোল, রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণ ভাঙড়ে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। ভোটের পরই ওই বিধানসভা এলাকায় রাজনৈতিক অশান্তিতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে দুই আইএসএফ কর্মী আছেন। শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ সেই ভাঙড়ের দিকে যাওয়ার সময় নওশাদকে বাধা দেয় বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। বলা হয়, ওই এলাকায় ঢোকার অনুমতি নেই তাঁর। বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও কেন ভাঙড়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের উপরে ক্ষোভ উগরে দেন নওশাদ। পুলিশ আধিকারিককে তিনি বলেন, ‘‘আমি ভাঙড়ের জনপ্রতিনিধি। আমার পরিচয়পত্র রয়েছে। তা হলে কেন যেতে পারব না?’’ পাল্টা পুলিশ আধিকারিক তাঁকে বলেন, ‘‘১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তাই সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই।’’ এই নিয়ে পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে দীর্ঘ নওশাদের কথোপকথন চলে। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ আমি বিধায়ক, আর আমায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না! রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ ভাবে আমায় আটকে রাখা যাবে না।’’

একটা সময় পুলিশ আধিকারিকের দিকে নিজের বিধায়কের পরিচয়পত্র এগিয়ে দিয়ে নওশাদ বলেন, ‘‘দেখুন তখন আমরা মুখটা কালো ছিল। এখন একটু ফর্সা হয়েছি। এটুকুই তফাৎ। এই আমার আইডি কার্ড। আমি বিধায়ক।’’ কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। ওই পুলিশ আধিকারিক জানান, তাঁর কাছে যে ‘অর্ডার কপি’ রয়েছে, সেখানে নওশাদকে ছাড় দেওয়া হবে কি না, তার উল্লেখ নেই। তাই তিনি তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দেবেন না। আধিকারিকের কাছে ওই ‘অর্ডার কপি’ চেয়ে নেন ভাঙড়ের বিধায়ক। এ ভাবে সময় গড়ায়। হুঁশিয়ারির সুরে নওশাদ বলেন, ‘‘কত ক্ষণ আটকে রাখে দেখি। আমি শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পুরো ভাঙড়ে তল্লাশি চালানো হোক। নির্বাচন কমিশন সক্রিয় থাকলে এত মৃত্যু দেখতে হত না। মৃতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতাম। মানুষকে বলব, কারও প্ররোচনায় পা দেবেন না।’’ তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তোপ দেগে বলেন, ‘‘১৪৪ ধারা কী, সেটা আমি জানি। আমি তো কোনও জমায়েত করছি না। জমায়েতের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাঙড়ে যাচ্ছি না। কিন্তু বিধায়ক হয়েও আমি আমার বিধানসভা এলাকায় ঢুকতে পারছি না। আমায় ১৪৪ ধারার কথা বলে হচ্ছে। এক জন মাত্র লোক রয়েছে আমার সঙ্গে। তার পরও যেতে পারছি না।’’ বিধায়কের সংযোজন, ‘‘আসলে কেন আমায় আটকানো হচ্ছে, সেটা জানি। রাজনৈতিক ভাবে আইএসএফের সঙ্গে লড়াইয়ে না পেরে এমন সব ব্যবস্থা করছে তৃণমূল। ভাঙড়ের মানুষ সব দেখছেন। এর জবাব কী ভাবে রাজনৈতিক ভাবে দিতে হয়, তা আমার জানা আছে।’’

Advertisement

এই ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক তথা ভাঙড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শওকত মোল্লার দাবি, ‘‘১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। আমরা কেউ ঢুকতে পারছি না। আবার উস্কানি দেওয়ার জন্য যাচ্ছেন উনি (নওশাদ)? আবার খুনোখুনি চাইছেন? উনি আবার যেতে চাইছেন উস্কানি দিতে। মায়ের কোল খালি করার চেষ্টা করছেন।’’

অন্য দিকে, টানা অপেক্ষার পর গাড়ি ঘুরিয়ে নেন নওশাদ। কিন্তু তার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া এবং গন্তব্য সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। নওশাদকে একাধিক বার ফোন করা হয়েছে। তিনি ফোন ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করা হয়। তারও কোনও জবাব আসেনি বিধায়কের তরফে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement