এ বার কি নতুন জীবনে পা দিতে চলেছেন সুজাতা মণ্ডল? নিজস্ব ছবি।
সৌমিত্র খাঁর সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদে সম্প্রতিই সিলমোহর দিয়েছে আদালত। এ বার কি নতুন জীবনে পা দিতে চলেছেন সুজাতা মণ্ডল? বাঁকুড়া জেলা আদালতে এসে সেই জল্পনাই উস্কে দিলেন তৃণমূলের এই নেত্রী। সরাসরি কিছু না বললেও সুজাতা শুধু বলেন, ‘‘বিষয়টি ক্রমশ প্রকাশ্য।’’
শনিবার বাঁকুড়া জেলা আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের শংসাপত্র নিতে গিয়েছিলেন সুজাতা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বিষাক্ত একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে এখন নিজেকে অনেকটাই মুক্ত মনে হচ্ছে। অনেক হালকা লাগছে। আমার জীবনের এখনও অর্ধেকের বেশি সময় বাকি রয়েছে। বিষাক্ত একটি সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়ার থেকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকা অনেক জরুরি।’’
সৌমিত্র অধ্যায় ভুলে তিনি যে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন, তেমন ইঙ্গিত আগেই আনন্দবাজার অনলাইনকে দিয়েছিলেন সুজাতা। শনিবারও তিনি বলেন, ‘‘নতুন সম্পর্কে জড়াব কি না, তা সময় বলবে এবং সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। সময় মানুষকে অনেক কিছুই ভাবতে বাধ্য করে। জীবনে ভাল কিছু এলে অবশ্যই তা ভেবে দেখব। এবং খুব তাড়াতাড়ি তা হবে।’’ তবে সুজাতা জানান, জীবনের এই পর্বে তিনি অত্যন্ত সচেতন। তাঁর কথায়, ‘‘আবেগে গা ভাসালে চলবে না। শান্ত মাথায় এগোতে হবে। জীবন অনেক কঠিন শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে। তেমনটা আবার ফিরে আসুক, আমি কখনওই তা চাই না। জীবনে নতুন কোনও মোড় এলে, আমি তা অন্যদের মতো লুকিয়ে রাখব না। কারণ সেই সম্পর্কের মধ্যে কোনও লাম্পট্য, নোংরামি বা বিষাক্ত ব্যাপার থাকবে না।’’
সুজাতার এই মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। উনি এখন তৃণমূলের কর্মী। সেই হিসাবে বলতে পারি, ওঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’ নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে সুজাতাকে কটাক্ষও করেছেন বিজেপি নেতা। বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া কুন্তলের সঙ্গে ওঁর ছবি দেখা গিয়েছে। কুন্তলের সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক কী ছিল, সেটা উনি আগে স্পষ্ট করুন।’’
২০১৬ সালের ১ জুলাই বড়জোড়ার বাসিন্দা সুজাতার বিষ্ণুপুরের তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্রের বিয়ে হয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সৌমিত্র। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তাঁকে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে প্রার্থীও করে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও সেই সময় আদালতের নির্দেশে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি সৌমিত্র। তাঁর হয়ে প্রচার করেন সুজাতা। নির্বাচনে জয়ের পর সুজাতাকেই নিজের জয়ের কৃতিত্ব দেন বিজেপি সাংসদ। কিন্তু রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিজেপি ছেড়ে সৌগত রায় ও কুণাল ঘোষের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন সুজাতা। সেই দিনই নিজের সল্টলেকের বাসভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সৌমিত্র। কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যায় তাঁকে। তার পরেই সুজাতা ও সৌমিত্রের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা শুরু হয়। যার ইতি ঘটল শনিবার।