কথা ছিল, পতাকা নাড়িয়ে নতুন বাসের উদ্বোধন করবেন তিনি। তা তো করলেনই না। উল্টে, মিনিটখানেকের জন্য বাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে এসেই রওনা দিলেন বিমানবন্দরের দিকে। তার মধ্যে পরিবহণ দফতরের সচিবের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা গেল তাঁকে। পাশে দাঁড়ানো মন্ত্রীকে একটু ‘দলছুট’ দেখাল।
তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী অবশ্যই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। স্বভাবতই প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি সারদা কেলেঙ্কারিতে পরিবহণমন্ত্রীর নাম সামনে আসায় তাঁকে এড়িয়েই চলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী? খোদ মদনবাবু-সহ তাঁর ঘনিষ্ঠমহল এমন সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছে। মদন মিত্রের এক ঘনিষ্ঠ নেতার বক্তব্য, “কে বলল! মুখ্যমন্ত্রী গাড়িতে ওঠার আগে মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় হয়েছে।”
তবে মন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা যতই বলুন না কেন, মুখ্যমন্ত্রীর মদনবাবুকে এড়িয়ে চলার প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। কারণ, সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআইয়ের তল্লাশি ও গ্রেফতারের ঘটনা যত বেড়েছে, যত মদনবাবুর নাম সামনে এসেছে, ততই মুখ্যমন্ত্রীর মদনবাবুকে এড়িয়ে চলার উদাহরণও বেড়েছে। সপ্তাহদুয়েক আগে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। সেখানে অতীতে বহু মন্ত্রী এবং বিশিষ্টজনকে দেখতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী, এর আগে পরিবহণমন্ত্রীকেও ওই হাসপাতালে দেখতে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু এ বারে মদনবাবু হাসপাতালে থাকার সময়ে ও পথ মাড়াননি।
এখানেই শেষ নয়, পরিবহণমন্ত্রীকে কার্যত অন্ধকারে রেখে পরিবহণ সচিব এবং মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের বাসভাড়া বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের খবর, হাসপাতালে শুয়ে বাসভাড়া বৃদ্ধির খবর পান মন্ত্রী। শুধু মদনবাবুই নন, এর আগে সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে এসেছে রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরও। শেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না তিনিও। তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, সারদা সংস্রব এড়াতে বস্ত্রমন্ত্রীকে নবান্নমুখো হতে বারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীই। এমন অবস্থায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য মঞ্চে মদনবাবুকে এড়িয়ে চলার ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, সচেতন ভাবেই কি তবে তিনি সারদা-ছোঁয়া এড়াতে চাইছেন।