Mahakumbh 2025

অযোধ্যা বনাম প্রয়াগরাজ! মহাকুম্ভের জন্য রেল আদৌ ‘স্পেশ্যাল’ ব্যবস্থা করেছে? প্রশ্ন সঙ্ঘ পরিবার থেকেই

রাম মন্দির উদ্বোধনের জমায়েত নিশ্চিত করতে যতটা কাঠখড় রেল পুড়িয়েছিল, মহাকুম্ভের কাঙ্ক্ষিত জমায়েতের প্রতি রেল মন্ত্রকের দায়বদ্ধতা কি ততটা নয়? সঙ্ঘ থেকেই সেই প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৫
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মহাকুম্ভে মহা-আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছিল ভারতীয় রেল। মেলা শুরুর পরেও নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নানা ‘স্পেশ্যাল ট্রেন’-এর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাঁরা মহাকুম্ভে যেতে চান, তাঁদের অভিজ্ঞতা ভারতীয় রেলের দাবির সঙ্গে মিলছে না। রাম মন্দির উদ্বোধনে অযোধ্যায় জনতার ঢল নামাতে যে ব্যবস্থা হয়েছিল, মহাকুম্ভের জন্য রেলের ব্যবস্থা ততটা নয় বলে অভিযোগ। এবং সেই অভিযোগ উঠছে সঙ্ঘ পরিবারের ভিতর থেকেই।

Advertisement

এ বারের মহাকুম্ভে অতীতের সব ধর্মীয় জমায়েতের রেকর্ড টপকে যেতে চান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ৪০-৪৫ কোটি পুণ্যার্থী মহাকুম্ভে স্নান করতে পারেন, এমন হিসাব করে প্রস্তুতি নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রথম দিনেই দেড় কোটির বেশি পুণ্যার্থী স্নান সেরেছেন বলে সরকারি সূত্রের হিসাব। ফলে মাস দেড়েকের মেলায় মোট পুণ্যার্থীর সংখ্যা কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু পুণ্যার্থীরা প্রয়াগরাজ পৌঁছবেন কী ভাবে? ভারতীয় রেলের ‘বিশেষ’ ব্যবস্থাপনার ভরসায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এখন সমস্যায়। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের পুণ্যার্থীরা তেমনই জানাচ্ছেন।

১৩ জানুয়ারি থেকে প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মেলা। চার দিন কাটতে না কাটতেই টিকিটের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। ‘তৎকাল’ পরিষেবায় চেষ্টা করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংরক্ষণ মিলছে না। রেলের তরফে জানানো হচ্ছে, কুম্ভমেলার জন্য ১৬ ডিসেম্বর থেকে ‘বুকিং’ চালু করে দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই তখন থেকে অগ্রিম বুকিং করে রেখেছিলেন।

Advertisement

এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, টিকিট পেতে হলে ডিসেম্বর থেকেই বুকিং করে রাখা কি আবশ্যক ছিল? তা হলে ‘কুম্ভ স্পেশ্যাল’ ট্রেনে তৎকাল টিকিটের ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে কেন? আর তৎকাল টিকিট কাটার ব্যবস্থা যখন রাখাই হয়েছে, তখন সেই টিকিট কিছুতেই ‘কনফার্মড’ হচ্ছে না-ই বা কেন?

২০১৯ সালে প্রয়াগরাজে যে অর্ধকুম্ভ হয়েছিল, সেখানে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল ‘নেত্রকুম্ভ’ (চোখের চিকিৎসা)। এ বারের মহাকুম্ভে সেই স্বাস্থ্য শিবির আয়োজিত হয়েছে আরও বড় আকারে। শুধু ‘নেত্রকুম্ভ’ নয়, সঙ্গে ‘শ্রবণকুম্ভ’(কানের চিকিৎসা), ‘দন্তকুম্ভ’ (দাঁতের চিকিৎসা) এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরিষেবা শিবির। উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের ছাতার তলায় থাকা চিকিৎসক সংগঠন এনএমও। তাদের দাবি, তারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্তত ৬০ জন চিকিৎসককে সঙ্গমতটের স্বাস্থ্যশিবিরে পাঠাচ্ছে। তালিকায় রাজ্যের প্রবীণ শিশু চিকিৎসক থেকে কল্যাণী এমসের সুপার-সহ অনেকেই রয়েছেন। প্রত্যেকের জন্য পাঁচ দিন করে স্বাস্থ্য শিবিরে ‘সেবা’ দেওয়ার সুযোগ বরাদ্দ। কিন্তু ট্রেনের টিকিট পেতে তাঁদের এখন নাজেহাল দশা।

কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে এনএমও-র সহ-কার্যবাহ (যুগ্ম সম্পাদক)। তিনি কোনও ‘স্পেশ্যাল’ ট্রেনের টিকিট পাননি। ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুযারি পর্যন্ত সঙ্গমতটের স্বাস্থ্যশিবিরে তাঁর ‘সেবা’ দেওয়ার কথা। সোমনাথ বললেন, ‘‘বহু কষ্টে নেতাজি এক্সপ্রেসের টিকিট পেয়েছি। ২৬ তারিখ রওনা হচ্ছি। কিন্তু আমার সঙ্গে আরও জনা পাঁচেক সিনিয়র চিকিৎসকের যাওয়ার কথা ছিল। তাঁদের টিকিট কিছুতেই কনফার্মড হচ্ছে না।’’ সোমনাথের কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে যাঁদের যাওয়ার কথা, তাঁরা প্রবীণ। তাঁদের পক্ষে গাড়িতে এতটা পথ যাওয়া মুশকিল। প্রয়াগরাজের বিমান টিকিটের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ফলে ট্রেনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু টিকিট মিলছে না।’’

যদিও পূর্ব রেলের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলছেন, ‘‘এমনিতেই প্রয়াগরাজ যাওয়ার জন্য পূর্ব রেল নিয়মিত অনেক ট্রেন চালায়। সেগুলো তো আছেই। পাশাপাশি, কুম্ভমেলা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চালিয়ে ৪২ জোড়া অতিরিক্ত পরিষেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

যে ৪২ জোড়া অতিরিক্ত পরিষেবার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি আসলে হাওড়া থেকে তিনটি রুটের এবং মালদহ থেকে একটি রুটের ‘স্পেশ্যাল’ ট্রেন। ওই ট্রেনগুলি সব মিলিয়ে দেড় মাসে মোট ৪২ বার হাওড়া এবং মালদহ থেকে ছাড়বে। শিয়ালদহ এবং কলকাতা স্টেশন থেকে কোনও স্পেশ্যাল ট্রেনের হদিস পূর্ব রেলের তরফে দেওয়া হয়নি।

ঘটনাচক্রে, গত বছরের জানুয়ারিতেই অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন হয়েছিল। সে সময়ও একগুচ্ছ স্পেশ্যাল ট্রেন ঘোষিত হয়েছিল। চিকিৎসক সোমনাথের কথায়, ‘‘ওই স্পেশ্যাল ট্রেন সত্যিই স্পেশ্যাল ছিল। সাধারণ যাত্রীদের জন্য নয়, শুধুমাত্র অযোধ্যাগামী পুণ্যার্থীরাই ওই সব ট্রেনের টিকিট পাচ্ছিলেন। সে ভাবেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছিল। ফলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী, প্রবীণ করসেবক এবং রাম মন্দির উদ্বোধনের সাক্ষী থাকতে চাওয়া সাধারণ মানুষ— সকলেই টিকিট পেয়েছিলেন। কিন্তু এ বার রেল তেমন ব্যবস্থা করেনি।’’ সোমনাথের অভিযোগ, ‘‘স্পেশ্যাল বলে যে সব ট্রেন এ বার চালানো হচ্ছে, তাতে সংরক্ষণ শুধুমাত্র মহাকুম্ভ যাত্রীদের জন্য নয়। সাধারণ যে সব যাত্রী অন্য কোনও গন্তব্যে যেতে চান, তাঁরাও এ সব ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন।’’

তা হলে কি প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ নিয়ে ততটা ‘যত্নশীল’ নয় রেল? রাম মন্দির উদ্বোধনের জমায়েত নিশ্চিত করতে যতটা কাঠখড় রেল পুড়িয়েছিল, মহাকুম্ভের কাঙ্ক্ষিত জমায়েতের প্রতি রেল মন্ত্রকের ‘দায়বদ্ধতা’ কি ততটা নয়? এর মধ্যে বিজেপির ‘অভ্যন্তরীণ সমীকরণ’ প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement