সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরির জায়গায় সিপিএম কি নতুন কাউকে অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেবে? আগামী বছর এপ্রিলের গোড়ায় সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস বসবে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে। সেখান থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার কথা। তবে সীতারামের মৃত্যুর পর সিপিএম আপাতত সাধারণ সম্পাদকহীন। সীতারামের মৃত্যুর পর আপাতত দায়িত্ব সামলাচ্ছে পলিটব্যুরো। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এ ভাবেই আগামী ছ’মাস সাধারণ সম্পাদকহীন হয়েই চলবে সিপিএম?
শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক। সেই বৈঠকে স্থির হয়েছে, নতুন কাউকে অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। পলিটব্যুরোই সমষ্টিগত ভাবে দায়িত্ব সামলাবে। তবে এক জনকে ‘কোঅর্ডিনেটর’ করা হতে পারে।
১৯৬৪ সালে সিপিএম তৈরি হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এমনটা ঘটেনি যে, সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন কোনও নেতা মারা গিয়েছেন। ফলে সিপিএমকে এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন অতীতে হতে হয়নি। এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে রাজ্য সিপিএমের সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “আমাদের পার্টিতে অন্তর্বর্তী বলে কিছু নেই। আগামী পার্টি কংগ্রেস থেকে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হবে। সেই কেন্দ্রীয় কমিটি নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবে। আপাতত সমষ্টিগত ভাবে নির্বাচিত পলিটব্যুরো কাজ চালাবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পলিটব্যুরোর এক সদস্য বলেন, “আমরা এখন পার্টি কংগ্রেসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছি। অর্থাৎ, একটা মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এখন নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার মানে হয় না। পার্টি কংগ্রেস থেকেই নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে কোথাও ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট বা ওয়ার্কিং সেক্রেটারির কোনও পদে নেই। ফলে আপাতত পলিটব্যুরোই সমষ্টিগত ভাবে কাজ চালাবে।”
তবে এই নিয়ে ভিন্ন মতও রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্য মনে করছেন, এক জন কাউকে অন্তর্বর্তিকালীন দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। বাংলা থেকে নির্বাচিত সিপিএমের এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেন, “আমি যা পার্টি বুঝি, তাতে এক জনকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তা না হলে পার্টি ‘হেডলেস’ হয়ে পড়বে।”
সিপিএমের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি দলের সর্বোচ্চ স্তর। কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত করে পলিটব্যুরো। আবার কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করে সাধারণ সম্পাদক। ফলে পলিটব্যুরো যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েও থাকে, তা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদন করাতে হবে। তখন ভিন্ন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কি না, সেই দিকেও নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
সিপিএমের বিভিন্ন স্তরে কোনও সম্পাদকের অসুস্থতা, প্রয়াণ ইত্যাদির পরে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করার রেওয়াজ রয়েছে। কেন পলিটব্যুরো নির্দিষ্ট কাউকে অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দিল না, তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তা হলে কি সীতারামের প্রয়াণের পরে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সিপিএমের ‘অসুবিধা’ হচ্ছে? সোমবার শেষ হবে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেই দিনই স্পষ্ট হয়ে যাবে, আগামী সাত মাস কী ভাবে চলবে সিপিএম।