১ সেপ্টেম্বর কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে পদযাত্রার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলার দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ঐতিহ্যের স্বীকৃতি মিলেছে ইউনেস্কোর তরফ থেকে। এই খুশিতে আগামী ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা-সহ রাজ্যজুড়ে পদযাত্রার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সোমবার সেই ঘোষণার সময় মমতা এমনটাও বলেন, যে কলকাতা ও জেলায় জেলায় দুপুর ১টা থেকে প্রস্তুতি এবং দুপুর ২টোয় শুরু হবে পদযাত্রা। এর জন্য অফিসগুলিতে দুপুর ১টার মধ্যে ছুটি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। স্কুলের ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন ছুটি হবে বেলা ১২টায়।
দু’টি বিষয়ই মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শের সুরে বলেছেন। ছুটির বিষয়ে সরকারি কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। আর এতেই তৈরি হয়েছে নানা ধোঁয়াশা। তবে কি অফিস ১টায় ছুটি? আলোচনা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের। অনেকে মনে করেছেন পুরো ছুটিও হতে পারে। আবার স্কুলের কথা বললেও মমতা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু বলেননি। ফলে ১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার অফিস, স্কুল, কলেজ অর্ধদিবস না কি পূর্ণদিবস তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা অফিসে কাজ করেন, তাঁরা ১টার মধ্যে ছুটি পেতে পারেন। তা হলে তাঁরা মিছিলে থাকতে পারবেন। ওই ভিড়ের পরে অনেকে স্কুলে যেতে পারবেন না। তাই ১০টা, ১১টা, ১২টার মধ্যে স্কুলটা কমপ্লিট করে দিলে ভাল।’’
মমতার এই ঘোষণা নিয়ে বিরোধিতার সুরও শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছে বামপন্থী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠন। ওই সংগঠনের নেতা স্বপন মণ্ডল চিঠিতে স্কুল যাতে ছুটি না থাকে সেই অনুরোধ করেছেন। কারণ হিসাবে তিনি জানিয়েছেন ওই দিন অনেক স্কুলেই পরীক্ষা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে ১ সেপ্টেম্বর ছুটি ধরে নিয়ে এর বিরোধিতা করেছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি।
স্কুল যাতে ছুটি হয়ে না যায় সেই দাবি তুলেছে কলকাতার অভিভাবকদের সংগঠন ইউনাইটেড গার্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা শিক্ষাস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত। করোনা পরিস্থিতির পরে এখন লেখাপড়ায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার উচিত। সেখানে সরকারি বিভিন্ন কার্যকলাপে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। দুর্গাপুজোয় ছুটি থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু সরকারি মিছিলের জন্য ছুটি অযৌক্তিক।’’
তৃণমূল সমর্থিত কর্মী সংগঠনের সদস্যরা ওই দিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে মিছিলে যোগ দেবেন ঠিক করলেও কো অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেছেন, ‘‘মিছিলে যাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। অযথা কেন ছুটি নেব? আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া স্কুল থেকে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তা-ও আবার ছুটি দিয়ে। করোনার কারণে আগেই অনেক দিন ছুটি হয়ে গিয়েছে। আর সেদিন আবার স্কুলে পরীক্ষা রয়েছে। এ কথাটাও মাথায় রাখা উচিত।’’
তবে কলকাতার স্কুলগুলি কী করবে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দক্ষিণ কলকাতার রামমোহন মিশন স্কুলের প্রধানশিক্ষক সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘পদযাত্রা যে হেতু জোড়াসাঁকো থেকে, ফলে আমাদের এ দিকে কিছু প্রভাব পড়বে না। তাই আমাদের কোনও অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। আপাতত যা ঠিক রয়েছে তাতে আমরা স্কুল খোলাই রাখছি।’’ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণা দামানি বলেন, ‘‘এখনও কোনও নির্দেশিকা আসেনি। কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’