দুর্গাপুজো নিয়ে পুজো কমিটি এবং পুলিশের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তুলে ধরতে ১ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে পদযাত্রার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই দিন কলকাতায় যেমন হবে মিছিল, তেমনই প্রতিটি জেলায় তা পালিত হবে। সেই কারণে, অফিসগুলিতে দুপুর ১টার মধ্যে ছুটি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। স্কুলের ক্ষেত্রে তা বেলা ১২টা। কলকাতার কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে ১০ হাজার স্কুল পড়ুয়াকে। তাঁর কথায়, “যাঁরা অফিসে কাজ করেন, তাঁরা একটার মধ্যে ছুটি পেতে পারেন। তা হলে তাঁরা মিছিলে থাকতে পারবেন। ওই ভিড়ের পরে অনেকে স্কুলে যেতে পারবেন না। তাই ১০টা, ১১টা, ১২টার মধ্যে স্কুলটা কমপ্লিট করে দিলে ভাল।” মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, তারাও যেন সাক্ষী থাকতে পারে।”
সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিয়ে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। বলেন, “এ বারের পুজো স্পেশাল। দুরন্ত এবং দুর্দান্ত-দু’টোই হবে।” যদিও তা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বিরোধীরা।
ঠিক হয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর দুপুর দু’টোয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে জমায়েত শুরু হবে। কলকাতা, সল্টলেক, হাওড়ার বিভিন্ন পুজো কমিটি মিছিল করে সেখানে যোগ দেবে। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, রঙিন পোশাক, ছাতা, পতাকা নিয়ে হাজির হতে হবে। বাঁশি, শাঁখ, ঢোল, ব্যান্ড বাজিয়ে চলবে মিছিল। রানি রাসমণি রোড দিতে মিছিল গিয়ে পৌঁছবে ধর্মতলায়। রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেড এবং চেয়ার থাকবে। সেখানে মানুষ মিছিল দেখতে পারবেন। ধর্মতলায় অনুষ্ঠান মঞ্চে সমাজের বিশিষ্টদের পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। থাকবেন শিল্প মহলের প্রতিনিধিরাও। তথ্যসংস্কৃতি দফতর দুর্গা প্রতিমার কাঠামো দিয়ে ব্যানার তৈরি করবে মিছিলের জন্য।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘সার্বিক নৈরাজ্য চলছে! এটা তারই অঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গে যখন মুখ্যমন্ত্রী বলে কেউ ছিল না, তখনও দুর্গাপুজো হত, আলো জ্বলত! নরেন্দ্র মোদী জন্মানোর আগেও তেরঙা পতাকা ছিল। প্রচারের এমন ঢক্কানিনাদ চলছে যেন, এই মুখ্যমন্ত্রী না এলে পুজো কী জিনিস, কেউ জানত না! মোদী না এলে তেরঙা কেউ দেখত না!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘সর্বজনীন একটা উৎসবকে ‘দাদাদের পুজো’য় পরিণত করা হয়েছে। এ বার পুজোর মিছিল করব বলে ছুটি! কৃষক বা শ্রমিকদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিলে কর্মদিবসের কথা বলে ওঁরা বিরোধিতা করেন। আর অন্য সময়ে যে কোনও কারণে কর্মনাশা ছুটি দিয়ে দেন!’’
দুর্গাপুজো বিসর্জনের দিনও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ৫, ৬, ৭ অক্টোবর হবে দুর্গাপুজোর ভাসান। জেলাগুলিতে পুজো কার্নিভাল হবে ৭ অক্টোবর। ৮ অক্টোবর তা হবে কলকাতায়।