পার্থর ডক্টরেটে বেনিয়ম! শিক্ষাবিদদের তোপে গাইড এবং উপাচার্যও

বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার পার্থবাবুর পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের নিশানায় পার্থবাবুর গাইড অনিল ভুঁইমালি (বর্তমানে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ। খোদ রাজ্যের বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় রাজ্যের ভাবমূর্তিই পুড়ল বলে মত তাঁদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ২০:০৬
Share:

বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার পার্থবাবুর পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের নিশানায় পার্থবাবুর গাইড অনিল ভুঁইমালি (বর্তমানে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ। খোদ রাজ্যের বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় রাজ্যের ভাবমূর্তিই পুড়ল বলে মত তাঁদের।

Advertisement

কী অনিয়ম হয়েছে?

পার্থবাবু যে থিসিস জমা দিয়েছেন সেখানে এর আগে বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের থিসিসের অংশ হুবহ উল্লেখ করা হয়েছে। এবং কোনও কোটেশন এবং তাঁদের নাম ছাড়াই! শিক্ষাবিদেরা জানান, থিসিসের মূল অংশে এ ভাবে অন্য কারও গবেষণার অংশ কোটেশন ছাড়া থাকতে পারে না। গবেষণার মৌলিকতা বজায় রাখতে কোটেশন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে প্রথমে অপরাধ করেছেন খোদ পরীক্ষার্থী অর্থাৎ পার্থবাবু। এবং সেটিকে অনুমতি দিয়েছেন ওই প্র্রার্থী যে অধ্যাপকের অধীনে গবেষণা করেছেন (গাইড) অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে অনিল ভুঁইমালি। অনিলবাবুর ছাড়পত্র পাওয়ার পরে তিন সদস্যের একটি কমিটির কাছে ওই থিসিস পেশ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নন এমন দু’জন এবং গাইড ওই থিসিসের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তা পাঠান সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে। এক্ষেত্রে তা পাঠানো হয়েছিল উপাচার্য সোমনাথ ঘোষের কাছে। অনিয়ম থাকার পরেও সেখান থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর পরে ভাইভা কমিটির কাছে পাশ করেন পার্থবাবু। এবং ডিগ্রিও পেয়ে যান। ফলে গোটা প্রক্রিয়াটিই পার্থবাবু প্রভাবিত করেছেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিজের গবেষণার থিসিসে যদি কোটেশন ছাড়া অন্য কারওর বক্তব্য রাখা হয়, তার অর্থ হয় আমি অন্যের লেখা চুরি করেছি। তিনি এবং একাধিক মানুষ কী ভাবে এই কাজটা করলেন? উপাচার্যের উচিত দ্রুত পার্থবাবুর পিএইচডি ডিগ্রি কেড়ে নেওয়া।’’

যদিও উপাচার্য সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে যে কোনও ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতি মেনেই দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। অভিযোগ নিয়ে উপযুক্ত কাগজপত্র পেলে খতিয়ে দেখার বিষয়টি ভাবনাচিন্তা করা হবে।’’

আরও পড়ুন- গাড়ি উল্টে জখম সাংসদ অর্পিতা ঘোষ

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লিটারেচার রিভিউ বলে যে অংশ রয়েছে সেখানে অন্য কারও গবেষণার অংশ রাখা যায়। কিন্তু উল্লেখ করতে হয় তাঁদের নাম। নিজের থিসিসে তা রাখলে নাম ও কোটেশন প্রয়োজন। না হলে তা আর নিজের গবেষণা থাকে না।’’ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘উপাচার্যের প্রয়োজন দ্রুত বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা। যদি সত্যিই এরকম হয়ে থাকে তাহলে তো পদক্ষেপ করা উচিত। ওই কমিটির ওপরেই সিদ্ধান্ত ভার ছাড়তে পারেন উপাচার্য।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু বলেন, ‘‘এটা গর্হিত অপরাধ। লেখা চুরির দায়ে ডিগ্রি চলে যাওয়া উচিত।’’

বুধবার অবশ্য ভাঙলেও মচকাননি অনিলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘নিজের গবেষণায় অন্য কারও গবেষণার কথা কোটেশন ছাড়াই উল্লেখ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে।’’ তা হলে কি উপাচার্যও ওই থিসিসকে অন্যায় ভাবে অনুমোদন দিয়েছেন? তাঁর জবাব, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় তার নিয়ম মেনেই কাজ করেছে। আসলে ভোটের আগে এই সব নিয়ে খবর করার অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। এটা ঠিক নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement