কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে প্রকাশ কারাট এক রকম যুক্তি দিচ্ছেন। অন্য কথা বলছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোরই অন্য সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। এই পরিস্থিতিতে বাম শিবিরের মধ্যে বিভ্রান্তি কাটাতে ফের চেষ্টা চালালেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।
আলিমুদ্দিনে সোমবার আলাদা করে তিন বাম শরিক সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সূর্যবাবু, বিমান বসু, মদন ঘোষেরা। বিতর্কের ফয়সালা অবশ্য তাতেই হয়ে যায়নি। ইতিমধ্যে সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্বের মতের উল্টো দিকে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়ার পক্ষেই অবস্থান নেওয়ায় বামফ্রন্টের মধ্যে বরং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে! শরিক নেতারা এ দিনের আলোচনায় বিভ্রান্তির প্রসঙ্গ তুললে সূর্যবাবু বুঝিয়েছেন, কী ভাবে চার ভাগে ভেঙে কর্মসূচি নেওয়া হবে, সে সব আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিছু কর্মসূচি হবে বাম দলগুলির নিজস্ব, কিছু থাকবে বামফ্রন্টের। কিছু কর্মসূচিতে বামফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলিকে পাশে নেওয়া হবে। আবার কিছু প্রতিবাদ থাকবে, যেখানে কংগ্রেসও সামিল হতে পারে। এতে বিভ্রান্তির কিছু নেই বলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের দাবি। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু শরিক নেতাদের বলেছেন, এর পরেও আলোচনা থাকলে ২ সেপ্টেম্বরের সর্বভারতীয় ধর্মঘটের পরে ফের বসা যাবে।
আপাতত বিতর্ক এবং বিভ্রান্তির ছায়া সরাতে সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটকেই বড় কর্মসূচি হিসাবে হাতে নিতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। আরএসপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। তলায় তলায় তাদের যা-ই বোঝাপড়া থেকে থাকুক না কেন। অথচ বিরোধী দল হয়েও বামেদের বক্তব্যে তেমন ঝাঁঝ নেই, কর্মসূচিও নেই! গাফিলতি মেনে নিয়েছেন সূর্যবাবুরা। আলিমুদ্দিনে কাল, বুধবারই বামফ্রন্টের বৈঠকে কিছু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। শরিকদের প্রস্তাব মেনে সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটে বৃহত্তর বামেদের সামিল করানোর জন্য সে দিনই অন্য বাম দলগুলির সঙ্গেও বৈঠক হবে।
সিপিআই এবং ফব নেতাদের বক্তব্য, শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলে ফ্রন্টের দায়িত্ব শেষ হতে পারে না। বিজেপি এবং ক্ষেত্রবিশেষে কংগ্রেসের সমালোচনাও করতে হবে। সেই কারণেই এ বার ৩১ অগস্ট খাদ্য আন্দোলনের ‘শহিদ দিবস’ ভাল ভাবে পালনের প্রস্তাব দিয়েছেন শরিক নেতারা। ছয়ের দশকে খাদ্য আন্দোলনে নিপীড়নের অভিযোগ ছিল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধেই। সিপিএম ৩১ অগস্টের প্রস্তাব মেনেও নিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা, কলকাতায় ওই মঞ্চ থেকে ২ সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটের প্রচারও বড় করে সেরে নেওয়া যাবে। শরিক দলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনে আমরা নেই, এই ধারণা তৈরি হয়ে গেলে আরও বড় বিপদ হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি।’’
সোমনাথের জন্য সিপিএম-কংগ্রেস
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গেলেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। তৃণমূলের মোকাবিলায় এবং বিজেপিকে রুখতে সব শক্তির একজোট হয়ে লড়াইয়ের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন সোমনাথবাবু। তাঁর ৮৭ পূর্ণ করার দিনে রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়িতে দেখা গিয়েছে সেই একজোট হওয়ার ছবিই! বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্রের পাশাপাশি প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ীরা।