‘এখন আমায় কে ভর্তি নেবে?’ প্রশ্ন প্রণবের উদ্বোধন করা কলেজের ছাত্রের

মুর্শিদাবাদের ওই কলেজের নাম সাগরদিঘি কামদাকিঙ্কর স্মৃতি মহাবিদ্যালয়।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০২:০৮
Share:

২০০৮ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হয় এই কলেজ। তাঁর বাবার নামে নামকরণও হয়। পড়ুয়ার আকালে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এখানকারই বিজ্ঞান শাখা। ইনসেটে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া বিষ্ণু লালা। —নিজস্ব চিত্র।

গত বছর চার জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিলেন। এ বছর এক জনও হননি! পড়ুয়াদের আকাল দেখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলেজের বিজ্ঞান শাখা। বিজ্ঞান শাখার তিন অতিথি শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম বর্ষের সবেধন নীলমণি পড়ুয়া বিষ্ণু লালাকেও কলেজের তরফে জানানো হয়েছে, অন্য কোথাও গিয়ে ভর্তি হতে।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের ওই কলেজের নাম সাগরদিঘি কামদাকিঙ্কর স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। ২০০৮ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই কলেজ চালু হয়। পরে তাঁর বাবার নামেই কলেজের নামকরণ হয়। ২০১৪ সালে পৃথক ভবন তৈরি করে চালু হয় বিজ্ঞান শাখা। নিয়োগ করা হয় তিন অতিথি শিক্ষক। কিন্তু সে ভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞান শাখা বন্ধ করে দিতে চাইছেন। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীরণ সরকার বলছেন, “গত বছর চার জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিলেন। তিন জন অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে কেউ ভর্তি হননি। তাই এক ছাত্রের জন্য তিন জন অতিথি শিক্ষকের খরচ বহন করা কলেজের পক্ষে অসম্ভব। বিজ্ঞান শাখা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।” কালিয়াচকের বাসিন্দা, প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া বিষ্ণু লালা জানাচ্ছেন, বিজ্ঞান শাখার দুরবস্থা দেখে তাঁরা কেউ তখন ভর্তি হতে চাননি। তখন কলেজের তরফে তাঁদের বলা হয়— ‘কম পড়ুয়া থাকলে শিক্ষকেরা ভাল পড়াতে পারবেন, সমস্ত বইপত্র কলেজের গ্রন্থাগার থেকে দেওয়া হবে।’ কিন্তু তার পরেও তিন জন ছাত্র কলেজ ছেড়ে চলে যান। বিষ্ণু বলছেন, ‘‘থেকে গেলাম কেবল আমি। সামনেই দ্বিতীয় সেমেস্টার। এই অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডেকে বলে দিয়েছেন, টিসি নিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে ভর্তি হতে। জোর করে টিসি ধরিয়ে দেবে বলে আমি বৃহস্পতিবার থেকে কলেজে যাচ্ছি না। মাঝপথে আমাকে কোন কলেজ ভর্তি নেবে, বলুন তো?’’ কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য, প্রণববাবুর ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ছাত্রটি তো ঠিক প্রশ্নই করেছেন। এ ভাবে বিজ্ঞান শাখা তুলে দেওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ওই ছাত্রের পড়াশোনা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল।”

কলেজের বিজ্ঞান শাখার অতিথি শিক্ষিকা শুচিস্মিতা কর্মকার, কঙ্কনা সাহা বলছেন, ‘‘গত বুধবারেই কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের আসতে নিষেধ করে দিয়েছেন। বিজ্ঞানের কোনও বিষয়ে এই কলেজে অনার্স পড়ানো হয় না। তাই পাশ কোর্সে পড়ার আগ্রহও কম। তবে আরও প্রচার দরকার ছিল। তা না করে বিজ্ঞান শাখা বন্ধ করে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়।’’

Advertisement

পরিচালন সমিতির আর এক সদস্য তামিজুদ্দিন মল্লিক বলছেন, “কলা বিভাগ দিব্যি চলছে। বিজ্ঞানে সাকুল্যে এক জন পড়ুয়া। তিন জন অতিথি শিক্ষক রাখা মানে বছরে ১.৮০ লক্ষ টাকা খরচ। এটা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement