Budget

WB state budget: নতুন নয়, কল্যাণ প্রকল্পগুলি মসৃণ ভাবে চালানোতেই জোর, করের সুবিধা বাড়ি-গাড়িতে

এক গুচ্ছ কল্যাণ প্রকল্পে ব্যয় বিপুল। অথচ অর্থনীতির নড়বড়ে দশার কারণে যথেষ্ট নয় রাজস্ব আদায়।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৬:৪৬
Share:

রাজ্য বাজেট পড়ছেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। শুক্রবার বিধানসভায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এক গুচ্ছ কল্যাণ প্রকল্পে ব্যয় বিপুল। অথচ অর্থনীতির নড়বড়ে দশার কারণে যথেষ্ট নয় রাজস্ব আদায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ বকেয়া টাকা আটকে রাখারও। এই পরিস্থিতিতে তাই নতুন করে সামাজিক প্রকল্প ঘোষণা করার বদলে পুরনোগুলি চালিয়ে যাওয়ার উপরেই বাজেটে জোর দিল রাজ্য। তারই মধ্যে আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রেশনে স্ট্যাম্প ডিউটি এবং সার্কল-রেটের সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো হল (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে)। ‘সুখবর’ রইল বৈদ্যুতিক ও সিএনজি গাড়ির ক্রেতাদের জন্য। ফিরিয়ে নেওয়া হল চা বাগানের জোড়া সেস। ওই শিল্পের জন্য মকুব করা হল কৃষি আয়করও।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এই বাজেট মা-মাটি-মানুষের। এর হাত ধরে কাজের সুযোগ তৈরি হবে কয়েক কোটি। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, এতে নতুন কিছু নেই। পুরোটাই রাজনৈতিক প্রচার। যে ব্যয় দেখানো হয়েছে, সেই টাকা আসবে কোথা থেকে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।

শুক্রবার বিধানসভায় ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের জন্য বাজেট পেশ করেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেখানে স্ট্যাম্প ডিউটিতে ২% এবং ১০% সার্কল রেটের ছাড় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজায় রাখার কথা জানান তিনি। জোর দেন চালু কল্যাণ প্রকল্পগুলি মসৃণ ভাবে চালানোয়।

Advertisement

আগের দু’দফায় ঘোষিত সামাজিক প্রকল্প তো আছেই। ভোট-প্রতিশ্রুতি রেখে তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসেও ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘দুয়ারে রেশন’, ‘পড়ুয়া ঋণ কার্ড’-এর মতো এক গুচ্ছ জনপ্রিয় প্রকল্প চালু করেছে তৃণমূল সরকার। তাতে ভোট-বাক্সে যেমন সাড়া মিলেছে, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে তা প্রশংসিত হয়েছে সরাসরি গরিব মানুষের হাতে নগদ জোগানোর জন্য। কিন্তু গোড়া থেকেই প্রশ্ন, এই সমস্ত প্রকল্প এত মানুষের জন্য চালিয়ে যাওয়ার টাকা আসবে কোথা থেকে?

এ দিন যে বাজেট চন্দ্রিমা পেশ করেছেন, তার বহর প্রায় ৩.২১ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু তেমনই সম্ভাব্য ব্যয়ও বিপুল। ঘাড়ে চেপে রয়েছে বিপুল ঋণের বোঝা। ফি বছর তা শোধেই যাচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। তার উপরে রাজ্যে বড় শিল্প যথেষ্ট সংখ্যায় না থাকা এবং দেশের নড়বড়ে অর্থনীতির কারণে রাজস্ব আদায় এখনও যথেষ্ট নয়। অনেকের মতে, এই বাস্তব মেনেই নতুন প্রকল্পের ঘোষণার ‘ঝুঁকি’ এ বার আর নেয়নি রাজ্য। চন্দ্রিমার কথায়, ‘‘...সব ধরনের কল্যাণ প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। এখন সেগুলি জোরদার ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাতে নজর রাখেন।’’

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্থ দফতরের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র বোঝাতে চেয়েছেন, অতিমারির কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়াই সঠিক কাজ। বৃদ্ধির হার-সহ বিভিন্ন মাপকাঠিতে দেশের তুলনায় রাজ্যের অর্থনীতির হাল ভাল বলেও তাঁদের দাবি।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যে সামাজিক সুরক্ষা আমরা দিই, তা আর কোথাও নেই। আবার গ্যাস, পেট্রল, ডিজ়েলের দাম বাড়বে। অর্থনীতির অবস্থা বেহাল। বেকারত্ব এবং গরিবের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষের হাতে পয়সা নেই। হাতে টাকা দিলে, অর্থনীতি সচল হয়। আমরা তাই সেটাই করি।’’

কল্যাণ প্রকল্পগুলিতে মোট প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। এর মধ্যে লক্ষ্মীর ভান্ডারে তা সব চেয়ে বেশি, ১০,৭৬৭ কোটি টাকা। নারী-শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরে বরাদ্দ (১৯,২৩৮ কোটি টাকা) বেড়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। বাকি মূল দফতরগুলিতে তুলনায় বরাদ্দ বৃদ্ধির হার কম।

খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে এ বার বরাদ্দ কমেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি বেড়েছে মাত্র ১৬ কোটি। শিল্প দফতরের জন্য বৃদ্ধি প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। পূর্ত দফতরের বরাদ্দ বৃদ্ধিও প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পরিকাঠামো তৈরিতে টান পড়বে না তো? যদিও মমতার বক্তব্য, ‘‘আগে রাস্তা ছিল ২৯,৭০৬ কিলোমিটার। এখন ১ লক্ষ ৩৪১ কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে।’’

সরকারের আর্থিক সমীক্ষা ও বাজেট বিবৃতি অনুযায়ী, বাজেট ঘাটতি মোটে দু’কোটি টাকা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের সম্ভাব্য নিজস্ব কর আদায় প্রায় ৭৯,৩৪৬ কোটি টাকা। করের ভাগ বাবদ কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য প্রায় ৬১,৪৩৬ কোটি। সঙ্গে কেন্দ্রের অনুদান ৫০,৫৯১ কোটি টাকা। কিন্তু এই সমস্ত ধরনের আয় মেলালেও, ব্যয় (২.৯১ লক্ষ কোটি টাকা) তার থেকে অনেক বেশি। অর্থাৎ, তেল এবং আবগারি খাতে মোটা কর আদায় হওয়ার পরেও খরচ সামলানোর জন্য রাজ্যকে নির্ভর করতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের ঋণের উপরে।

আগামী বছরের জন্য রাজ্য বাজার থেকে প্রায় ৭৩,২৮৬ কোটি টাকা ধার নেবে। সুদে-আসলে ঘাড়ে প্রায় ৬৯,৫১১ কোটি টাকার বোঝা। তার উপরে শেষ হয়ে আসছে জিএসটি ক্ষতিপূরণের মেয়াদ। তার পরে আর তা না-বাড়লে, পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ার সম্ভাবনা। আর এই সমস্ত কারণেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশের মধ্যে জল্পনা, প্রত্যাশিত ডিএ বৃদ্ধি এ বারও হবে তো? বেতন খাতে গত বছরের তুলনায় এ বার বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। তাতে নতুন নিয়োগ কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে অমিতের কথায়, ‘‘দু’তিন বছর ধরে কোভিডের দাপট চলেছে। এই সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর কথা বিবেচনা করা উচিত কেন্দ্রের।’’ মমতারও দাবি, ‘‘কেন্দ্রের থেকে এখনও ৯০ হাজার কোটি টাকা মতো পাই।’’ তাঁর দাবি, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ পেনশন দেয়। বিজেপিশাসিত কোন রাজ্য তা দেয় না।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, চর্মশিল্প, ডেউচা-পাঁচামি, তাজপুর বন্দর, অশোকনগরে তেল প্রকল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, ছোট-মাঝারি শিল্প, একশো দিনের কাজ ইত্যাদি মিলিয়ে কয়েক কোটি কর্মসংস্থান হবে। পরিকাঠামো উন্নয়নও চলছে সমান তালে।

কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘বাজেটে নতুন কিছু নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে চালানো হচ্ছে।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরোপুরি রাজনৈতিক ভাষণ। ...বকেয়া নিয়ে রাজ্যের দাবি কতটা সত্য, সন্দেহ রয়েছে। শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement