কে কোথায়, জানতে হয়রানি

বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার কচুয়ায় দুর্ঘটনার পরে ‘সুচিকিৎসা’র আশায় কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল আহতদের অনেককেই। কিন্তু কাকে কোথায় ভর্তি করা হয়েছে, সে বিষয়ে কারওই বিশেষ ধারণা ছিল না।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস ও দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৫
Share:

বিপর্যয়: অপর্ণা সরকারের দেহের সামনে ভেঙে পড়েছেন তাঁর বোন। শুক্রবার, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ

সকলেই ছুটছেন কলকাতার উদ্দেশে! কিন্তু কলকাতার ঠিক কোথায়, কেউ জানেন না!

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার কচুয়ায় দুর্ঘটনার পরে ‘সুচিকিৎসা’র আশায় কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল আহতদের অনেককেই। কিন্তু কাকে কোথায় ভর্তি করা হয়েছে, সে বিষয়ে কারওই বিশেষ ধারণা ছিল না। ফলে দিগ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ালেন পরিজনেরা। অভিযোগ, এ বিষয়ে ঠিকঠাক তথ্য জানাতে কোনও কন্ট্রোল রুমও ছিল না! ফলে শহরের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে পরিজনেরা শেষমেশ জানতে পারলেন, বয়স্ক আত্মীয়ের মৃত্যু হয়েছে। কেউ আবার দেখলেন, তাঁর মেয়েকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে হাসপাতালে।

আহতদের মধ্যেই ছিলেন অপর্ণা সরকার। তাঁর স্বামীর নাম তারক ও বছর আটেকের ছেলের নাম দীপ। শুক্রবার ভোরে বনগাঁয় অপর্ণার বাপের বাড়িতে বসে বোন সুপর্ণা মণ্ডল কচুয়ার দুর্ঘটনার খবর পান। এর পর থেকেই শুরু হয় তাঁর হয়রানি। সুপর্ণার অভিযোগ, ‘‘বসিরহাট থানায় গেলে বলা হয়, অপর্ণা আর জি করে ভর্তি। অবস্থা খারাপ। তখনও জামাইবাবু ও বোনপোর কোনও খবর নেই। মাঝরাস্তাতেই এক আত্মীয় ফোনে জানান, আর জি করে নয়, অপর্ণাকে পাঠানো হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।’’

Advertisement

তবে সেখানে গিয়েও অপর্ণার খোঁজ পাননি সুপর্ণা। বললেন, ‘‘মেজাজ হারিয়ে ওঁদেরই বলি, দিদিকে খুঁজে দিন। ওঁরাই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে দেখলাম, সব শেষ! দিদি আর বেঁচে নেই। পরে জানতে পারি, জামাইবাবু আর বোনপো বসিরহাটের হাসপাতালেই আছেন।’’ হাসপাতালে বহু আহতের পরিবারেরই এমন হয়রানির কথা শোনা গিয়েছে।

বসিরহাট মির্জাপুরের বাসিন্দা, বছর এগারোর বর্ষা বিশ্বাসের বাবা বরুণ বিশ্বাসের আবার দাবি, ‘‘বসিরহাট থানা আমাদের কিছুই জানাতে পারেনি। এর পরে মাটিয়া থানায় গেলে সেখান থেকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে যেতে বলা হয়। ওই হাসপাতাল আবার বলে দেয়, কলকাতার কোনও হাসপাতালে থাকলেও থাকতে পারে। এর পরে কোনও মতে হাতে-পায়ে ধরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নামটা পাই।’’ বরুণবাবুর অভিযোগ, ন্যাশনাল মেডিক্যালে গিয়ে তাঁরা দেখেন, বর্ষাকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে। বরুণবাবুর কথায়, ‘‘আমার আসার আগে পর্যন্ত স্রেফ অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল মেয়েটাকে। আমরা বাড়ির লোকজন বলার পরেও ওই অবস্থাতেই ফেলে রেখেছিল।’’ দুপুরের পরে বর্ষাকে অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করার সময়ে বরুণবাবু বলেন, ‘‘এ ভাবে তো আমাদের দিনভর ঘুরে বেড়ানোর কথা নয়! ঠিক চিকিৎসাও হচ্ছে না।’’

হাসপাতালের শয্যায় বর্ষা বিশ্বাস। শুক্রবার, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ

ফের এক বিপর্যয়ের পরে এমন অব্যবস্থা কেন? কেনই বা রোগীর আত্মীয়দের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে হল? এ দিন চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে! এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। গাফিলতির প্রশ্নই নেই।’’ আর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বললেন, ‘‘মাঝরাস্তায় অনেক রোগী নিজেদের ইচ্ছেমতো হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে ঢুকে পড়েন। সবটা নজরে রাখা সম্ভব হয়নি।’’ কন্ট্রোল রুম না থাকা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের একার পক্ষে সবটা দেখা সম্ভব নয়।’’

বসিরহাট-২ ব্লকের বিডিও মধুমিতা ঘোষও বললেন, ‘‘উৎসবের জন্য একটা কন্ট্রোল রুম খোলা ছিল বটে, তবে বিপর্যয়ের পরে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আর সবটা দেখা সম্ভব হয়নি।’’ বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদারের মন্তব্য, ‘‘আমাদের এখানে তিন জন ভর্তি রয়েছেন। বাকিদের তথ্য আমাদের কাছে ছিল না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement