—ফাইল চিত্র।
দেশের বাকি অংশের সঙ্গে রবিবারেই রেল-যোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল উত্তরবঙ্গের। সোমবার সেই যোগ পুনঃস্থাপিত হয়নি। কবে হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না রেল। তারা জানিয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদের জেরে কামরা ও স্টেশন পোড়ানো হয়েছে। নষ্ট হয়েছে রেলের সুরক্ষা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিও। তার জেরেই ট্রেন চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পূর্ব রেল জানিয়েছে, অশান্তির জেরে তাদের ১৫টি স্টেশন এবং ট্রেনের ৬২টি কামরা নষ্ট হয়েছে।
পূর্ব রেলের কৃষ্ণনগর-লালগোলা, আজিমগঞ্জ-নিউ ফরাক্কা, আজিমগঞ্জ-কাটোয়া ও নলহাটি-আজিমগঞ্জ সেকশনে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত মোট ৮৪টি দূরপাল্লার ট্রেন, ১৭১টি করে ডেমু-মেমু এবং লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। রেলের আর্জি, ‘‘যাত্রী সুরক্ষা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ধ্বংসের ফলে অবরোধ উঠে গেলেও পরিষেবা স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। অনুগ্রহ করে রেলের সম্পত্তি নষ্ট করবেন না।’’
গত কয়েক দিনে বিক্ষোভে রেলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে এ বার নাগরিক সমাজকে কাজে লাগাতে চাইছে রেল পুলিশ-প্রশাসন। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, শিয়ালদহ রেল পুলিশের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকার প্রশাসনিক কর্তা, ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় নাগরিক সমাজের পরিচিত মুখ, রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ঠেকানোর কাজ শুরু করেছেন রেল পুলিশ থানার আধিকারিকেরা। এই পদ্ধতিতে সোমবার মুর্শিদাবাদের দেবগ্রাম এবং নদিয়ার পলাশি, বেথুয়াডহরিতে সরকারি সম্পত্তি বাঁচানো গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ুতে গোলমালের পরে সেখানেও বারুইপুর রেল পুলিশের তরফে ওই বৈঠক করা হয়েছে। বাকি এলাকাতেও একই নির্দেশ গিয়েছে।
ট্রেন বাতিল
দার্জিলিং মেল, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস, তিস্তা-তোর্সা, হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী, কলকাতা-লালগোলা এক্সপ্রেস-সহ মোট ২০টি ট্রেন সোমবার বাতিল করা হয়েছে। হাওড়া-কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং কলকাতা-বালুরঘাট এক্সপ্রেস মালদহ পর্যন্ত চলেছে। হাওড়া-আজিমগঞ্জ এক্সপ্রেসকে রামপুরহাট পর্যন্ত চালানো হয়। আজ, মঙ্গলবারেও উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন বাতিল থাকছে বলে রেল সূত্রের খবর।
রেল পুলিশের বক্তব্য, অশান্তি ঠেকাতে বলপ্রয়োগের বদলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে বিক্ষোভকারীদের ভাঙচুর থেকে বিরত করাই তাদের লক্ষ্য। এ দিন দেবগ্রাম, পলাশি এবং বেথুয়াডহরিতে বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেল পুলিশের তরফে স্থানীয়
বাসিন্দা ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার পরেই স্থানীয় শ’খানেক বাসিন্দা স্টেশনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর ঠেকানোর আবেদন জানান। বিক্ষোভকারীরা আর ভাঙচুর করেননি। রেল পুলিশের কর্তারা জানান, গোটা রাজ্যে ২০টি স্টেশনে বড় ধরনের গোলমাল হয়েছে। ছ’টি হয়েছে শিয়ালদহ রেল পুলিশের এলাকায়। ট্রেন ও স্টেশন ভাঙচুরে মামলাও করা হয়েছে।
হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় এ দিনও ট্রেন চলাচল পুরো স্বাভাবিক হয়নি। হাওড়া-হলদিয়া এবং হাওড়া-আমতা শাখায় বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বিকেলে বজবজ শাখায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।