শোকস্তব্ধ: লাদাখে নিহত জওয়ান রাজেশ ওরাংয়ের বাড়িতে তাঁর পরিজনেরা। মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়ায়। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
স্কুল থেকেই দেশকে সেবা করার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদানের কথা বলতেন। মোবাইলেও চলত সেনাদের বীরত্বের নানা ভিডিয়ো। প্রিয় বন্ধু রাজেশের এমন অনেক স্মৃতিই মনে আসছে তাঁর স্কুলের সহপাঠীদের।
মঙ্গলবারই সেনা থেকে জানানো হয় লাদাখে চিনা সেনার হামলায় মৃত্যু হয়েছে মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়ার বাসিন্দা রাজেশ ওরাংয়ের। সেই খবর শুনে প্রথমটায় বিশ্বাস করতে পারছিলেন না দিবাকর মুখোপাধ্যায়, সুমন দাস, আশিস মাহারা, বিক্রম ভান্ডারিরা। মালাডাং সেহেড়াকুড়ি বংশীধর উচ্চ বিদ্যালয়ে তাঁরা রাজেশের সঙ্গেই পড়তেন। রাজেশের বন্ধুদের কথায়, ‘‘আমাদের সবার খুব প্রিয় বন্ধু ছিল রাজেশ। নিজের জীবনের লক্ষ্যের দিকে অবিচল ছিল। স্কুল থেকেই ঠিক করে নিয়েছিল দেশসেবার কাজে যুক্ত হবে। আমাদেরও সব সময় বলতো সবাই একসাথে ফৌজের কাজে যোগ দেব।’’ তাঁরা জানান, বন্ধুদের আড্ডায় সবাই মোবাইলে হাসির বা মজার ভিডিয়ো দেখলেও রাজেশ নিজের মোবাইলে সেনাবাহিনী সংক্রান্ত ভিডিয়ো, সিনেমা ছাড়া কিছু দেখতেন না।
গত সেপ্টেম্বর মাসে এসেছিলেন রাজেশ। তখনই একসাথে পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে শেষবার আড্ডা দেন তিনি। বন্ধুরা জানান, পুজোর ছুটিতে এসে সেহেড়াকুড়ি মিলনী সঙ্ঘের মন্দির বানানোর জন্য ৫০০০ টাকা দিয়ে যান তিনি। এ বার এসে আরও কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তাঁর বন্ধুরা বলেন, ‘‘ছুটিতে এসেই আমাদের সঙ্গে আগে দেখা করত। ফোন করে বলত আমি এখানে আছি চলে আয়। রাজেশ এলে আমরা আড্ডা দিতাম স্কুল মাঠে।’’ ছুটিতে গ্রামে এসেই নিজের কাজের কথা, যেখানে থাকতেন সেখানকার কথা বন্ধুদের শোনাতেন রাজেশ। বন্ধুরা বলেন, ‘‘ও বলত তোরা একবার চল আমার সঙ্গে তাহলে বুঝবি আমি কতটা আনন্দে আছি। কষ্ট হয়, কিন্তু সেটাকে আমি কষ্ট মনে করি না। দেশের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি বলে কষ্টটা হাসিমুখে মেনে নিয়েছি।’’
মঙ্গলবার রাতে রাজেশের ভাইয়ের ফোনে দুঃসংবাদটা পান তাঁর বন্ধুরা। তারপর থেকেই সকলের মন খারাপ। রাজেশের স্কুলের শিক্ষক বিমানচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘সকলের খুব প্রিয় ছাত্র ছিল রাজেশ। মঙ্গলবার রাতে খবর পাওয়ার পর থেকেই মন খারাপ হয়ে গেছে। ছেলেটা কথা খুব কম বলত। কিন্তু নিজের মনের মধ্যে জেদটাকে ধরে রাখতো সে। সমস্ত খেলায় পারদর্শীও ছিল। স্কুলের সমস্ত খেলায় যোগ দিত। হঠাৎ এই খবর পেয়ে আমরা সকলেই মর্মাহত।’’
এ দিন সকাল থেকেই রাজেশের বাড়িতে ভিড় জমান স্থানীয় মানুষজন। ভুতুরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বুধবার সকাল থেকে গ্রামে রাজেশের মৃতদেহ আনার জন্য রাস্তার ওপর ফেলা হয় মাটি। তা গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই সমস্ত জায়গায় ছিটিয়ে রাস্তা সংস্কার করা হয়। যাতে রাজেশের মৃতদেহ নিয়ে আসতে কোনও সমস্যা না হয়।