Independence Day Special

Independence Day 2022: এমন দেশ মিলবে না কোথাও, এই আমার দেশ

আমরা এ দেশের প্রতি কতটা অনুরক্ত সে কথা অনেকে জানেন না। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট আমাদের দেশ স্বাধীন হয়, তখন আমার বছর দশেক বয়স।

Advertisement

সৈয়দ আমির মির্জা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ০৯:৩৮
Share:

পূর্বপুরুষদের রক্ত শরীরে বইলেও আমরা মনে প্রাণে ভারতীয়।

ইরাকের নজফ শহরের পূর্বপুরুষদের রক্ত শরীরে বইলেও আমরা মনে প্রাণে ভারতীয়। সুবে বাংলার নবাব পরিবারের অনেকেই এ দেশ ছেড়ে যাননি। এখানকার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নানা ভাষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন পৃথিবীর আর অন্য কোনও দেশে পাওয়া যাবে না। তাই তো অনেক সুযোগ থাকলেও আমরা এ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাইনি। মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁত কামড়ে পড়ে আছি। শুধু তাই নয়, দেশভাগের সময় আমাদের পূর্বপুরুষেরা পাকিস্তান নয়, ভারতে থাকার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।

Advertisement

আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন মিরজাফর। পলাশির প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌল্লা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন। তার পর থেকে সিরাজের সেনাপতি মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা বাঙালি বিশ্বাস করে আসছে। সেই অবিশ্বাস এখনও আমাদের পরিবারের উপরে রয়েছে। কিন্তু আমি দ্বিধাহীন ভাবে জানাতে চাই, মিরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, তিনি পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন।

আমরা এ দেশের প্রতি কতটা অনুরক্ত সে কথা অনেকে জানেন না। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট আমাদের দেশ স্বাধীন হয়, তখন আমার বছর দশেক বয়স। সে সময়ের কথা আবছা আবছা মনে রয়েছে। তখন ব্রিটিশ সরকার দেশভাগের মানচিত্রে যে আঁচড় দিয়েছিল তাতে মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সে সময় রেডিয়ো মারফত লোকজন জানতে পেরেছিলেন, মুর্শিদাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। আমাদের পূর্ব পুরুষ তথা তৎকালীন নবাব বাহাদুর অব মুর্শিদাবাদ ওয়াসেফ আলি মির্জা এ বিষয়ে সব থেকে বেশি প্রতিবাদ করেছিলেন। মুর্শিদাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনি উদ্যোগী হন। সে সময় নির্দিষ্ট জায়গায় তিনি মুর্শিদাবাদকে ভারতভুক্তির জন্য বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় মুর্শিদাবাদ ভারতের স্বাধীনতার তিন দিন পরে ভারতের অন্তর্গত হয়।

Advertisement

তার পরে স্বাধীন দেশে সুবে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের কিল্লা নিজামত চত্বরে আমার বালক বয়স থেকে বড় হয়ে ওঠা। নবাবি শাসন দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু এখনও দেশের মানুষ খাদ্যের জন্য, শিক্ষার জন্য, কর্মসংস্থানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তা দেখে দুঃখ হয়। সরকারকে এ সব বিষয়ে উন্নয়নে আরও এগিয়ে আসতে হবে।

এই দেশ নানা ভাষাভাষী, নানা ধর্মের লোকজন বসবাস করেন। এখানকার মানুষ একে অপরের ধর্মকে, ভাষাকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করেন। শুধু এখন নয়, যুগ যুগ ধরে এ দেশে এমন বৈচিত্র্যের মধ্য ঐক্য দেখা যাচ্ছে। এমন বৈচিত্র্যময় দেশ পৃথিবীর অন্য কোথাও মিলবে না। সে জন্য তো অন্য দেশে যাওয়ার সুযোগ থাকলে নিজের জন্মভূমিতে থেকে গিয়েছি।

অনুলিখন: সামসুদ্দিন বিশ্বাস

(লেখক মুর্শিদাবাদ নবাব পরিবারের সদস্য)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement