নিজস্ব চিত্র।
সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয়তা বাড়াতে শুরু করলেন বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রামে রবিবার দেখা গেল বিজেপি বিধায়কদের। কেউ সীমান্ত পরিদর্শনে গেলেন। কেউ আবার অংশ নিলেন সীমান্তবর্তী গ্রামে বিএসএফ কর্তৃক আয়োজিত কর্মসূচিতে। বিজেপি নেতৃত্বের নির্দেশেই কি সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে সক্রিয়তা বাড়াচ্ছেন বিধায়করা? দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানালেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজেপির বিধায়ক-সাংসদরা সচেতন, তাঁরা নিজেরাই জানেন এই মুহূর্তে কী কর্তব্য।
মালদহ জেলার হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক জুয়েল মুর্মু রবিবার নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের মধ্যেই বৈদ্যপুর অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরিদর্শনে যান। এলাকায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার স্থলসীমান্তে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই বলে বিধায়ক জানান। কাঁটাতারহীন এলাকায় বিএসএফ কী ভাবে নজরদারি চালাচ্ছে, বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে তা খতিয়ে দেখেন তিনি। স্থানীয় কেদারিপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পে তিনি বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন।
উত্তরবঙ্গের আর এক জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরেও রবিবার সীমান্তে বিজেপি বিধায়কের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে। বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ী পরিদর্শন করেছেন শিবরামপুর এলাকার ঠান্টাপাড়া গ্রাম। সীমান্তবর্তী এই গ্রাম জনজাতি প্রধান। সেখানেও কাঁটাতারহীন স্থলসীমান্ত রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বিএসএফ সক্রিয় হয়েছিল ঠান্টাপাড়া গ্রামের একটা অংশ কাঁটাতারে ঘিরে ফেলতে। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কয়েক দিন আগে তাতে বাধা দেয়। দুই বাহিনীর মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং-ও হয়। কিন্তু তার পরেও কাঁটাতারের জট কাটেনি। এখনও বেড়া দেওয়া যায়নি ঠান্টাপাড়ায়।
সীমান্ত পরিদর্শন এবং বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক সেরে অশোক রবিবার বলেন, ‘‘সীমান্তরেখা থেকে দেড়শো মিটার ছেড়ে কাঁটাতার লাগানোর নিয়ম। ঠান্টাপাড়া গ্রামটাকে পুরোপুরি বেড়ার মধ্যে রাখতে গেলে কাঁটাতার একটু ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে। তার জন্য অল্প কিছুটা জায়গায় সীমান্তরেখার সঙ্গে ১৫০ মিটার দূরত্ব রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তা নিয়েই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’ বালুরঘাটের বিধায়ক বলেন, ‘‘সমস্যা মিটে যাবে। দুই বাহিনী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলবে।’’
উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ মহকুমাতেও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মসূচিতে রবিবার বিজেপি বিধায়ককে দেখা গিয়েছে। বিএসএফের পাঁচ নম্বর ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে এলাকায় ‘সীমান্ত যুব ফুটবল’ এবং ‘সীমান্ত যুব ভলিবল’ প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছে। বিএসএফের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বোঝাপড়া আরও মসৃণ করতেই এই ধরনের কর্মসূচির আয়োজন। সেই ভলিবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম আংরাইলে। সেই অনুষ্ঠানে বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার।
আন্তর্জাতিক সীমান্তে হঠাৎ বিজেপি বিধায়কদের এত সক্রিয়তা কেন? এক দিনে তিন জেলায় তিন বিধায়ক সীমান্তে হাজির কি দলের নির্দেশে? বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং তার প্রেক্ষিতে সীমান্তবর্তী এলাকার মেজাজ আঁচ করেই কি জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় হতে নির্দেশ দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব? রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত বললেন, ‘‘কোনও নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশে কী চলছে এবং তার জেরে সীমান্তবর্তী এলাকায় কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা নিজেরাই সচেতন। তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা নিজেরাই সক্রিয় হয়েছেন।’’ সুকান্তের কথায়, ‘‘সীমান্তে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের কী সমস্যা হচ্ছে, সমস্যার সমাধানে এখন কী করা দরকার, এ সব খতিয়ে দেখতেই আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সীমান্তে যাচ্ছেন।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, দলের তরফ থেকে জনপ্রতিনিধিদের কাছে স্পষ্ট কোনও নির্দেশ না গেলেও, সীমান্তের পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখার এবং প্রয়োজনে সক্রিয় হওয়ার বার্তা আগেই দেওয়া হয়েছে। সুকান্ত বলেন, ‘‘আমাদের জনপ্রতিনিধিরা এই পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে সহযোগিতাও করবেন।’’