Bangladesh

বাংলাদেশের মর্গে পড়ে আট ভারতীয়ের মৃতদেহ! ঢাকার অভিযোগ, জেনেও ফেরত নিচ্ছে না নয়াদিল্লি

বাংলাদেশের কারা দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে, ন’টি দেহের মধ্যে ছ’টি দেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা রয়েছে। দু’টি দেহ শরীয়তপুরের এবং একটি দেহ খুলনা হাসপাতালে রাখা রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৯
Share:

মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দাবি, দেহ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত এবং পাকিস্তানের হাই কমিশনকে বার বার চিঠি দিয়েছে তারা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ভারতের আট এবং পাকিস্তানের এক নাগরিকের দেহ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছে। সংবাদ মাধ্যম ‘প্রথম আলো’-র কাছে এমনটাই দাবি করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কারা দফতর। তাদের আরও দাবি, মৃত ওই নয় জন তাদের কারাগারে বন্দি ছিলেন। কয়েকটি দেহ সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে রয়েছে বলেও দাবি করেছে বাংলাদেশ। তাদের আরও দাবি, এই নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের হাই কমিশনকে বার বার চিঠি দিয়েছে তারা। যদিও তাতে লাভ হয়নি। মৃতদেহ সংরক্ষণে তাদের অনেক খরচ হচ্ছে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশের কারা দফতর।

Advertisement

বাংলাদেশের কারা দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে, ন’টি দেহের মধ্যে ছ’টি দেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা রয়েছে। দু’টি দেহ শরীয়তপুরের সদর হাসপাতালে এবং একটি দেহ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা রয়েছে। কারা দফতরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মহম্মদ ‘প্রথম আলো’-কে বলেছেন, ‘‘দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে দুই দেশের হাই কমিশনের কাছে বার বার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও দেহ নেয়নি। দেহ সংরক্ষণে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।’’

পাকিস্তানের এক নাগরিকের দেহ রাখা রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মহম্মদ আলি। ২০২১ সালের ১৮ জুন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। করাচির ওই বাসিন্দার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ছিল। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

ঢাকার মর্গে মহম্মদ ছাড়াও দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে ইমতাজ ওরফে ইনতাজ, তারেক বাইন, খোকন দাস, অশোক কুমার, কুনালিকার দেহ। কারা দফতরের দাবি, তাঁরা সকলেই ভারতীয়। অনুপ্রবেশের অভিযোগে সে দেশে বন্দি ছিলেন তাঁরা। রোগ বা বয়সের কারণে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন তাঁরা। কারা দফতরের আরও দাবি, ইমতাজের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। ২০২১ সালের ১৪ জুলাই তিনি মারা গিয়েছিলেন। কারা দফতর জানিয়েছে, মৃত তারেকের বাড়ি বিহারে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল। গোপালগঞ্জের জেলে বন্দি থাকার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি মারা যান। গোপালগঞ্জ থেকে এনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে তাঁর দেহ রাখা হয়।

কারা দফতর বলেছে, মৃত খোকনের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। ২০২২ সালের মার্চে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল। শরীয়তপুরের জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়, সেখান থেকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই থেকে মর্গে দেহ। বাংলাদেশের কারা দফতরের পরিসংখ্যান বলছেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে অশোক নামে যে ব্যক্তির দেহ রয়েছে, তিনি দিল্লির বাসিন্দা। অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের অগস্টে মারা গিয়েছিলেন তিনি। মৃত কুনালিকার বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মারা গিয়েছিলেন তিনি।

কারা দফতর দাবি করেছে, শরীয়তপুরের মর্গেও দুই ভারতীয়ের দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম সতেন্দ্র কুমার। তিনি দিল্লির বাসিন্দা ছিলেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি মারা যান। সেই থেকে দেহ মর্গে পড়ে রয়েছে। শরীয়তপুরের মর্গে পড়ে রয়েছে বাবুল সিংহের দেহ। কারা দফতরের দাবি, তিনিও ভারতীয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে মারা যান তিনি।

খুলনার হিমঘরে দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে সুরজ সিংহের দেহ। বাংলাদেশের কারা দফতর জানিয়েছে, তিনি ভারতীয়। অনুপ্রবেশের অভিযোগে খুলনা জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের ৭ জুলাই তিনি মারা গিয়েছিলেন।

কারা দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, সে দেশে ৬৮টি জেলে বিদেশি বন্দির সংখ্যা ৪৬৭। কারা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদেশি বন্দির মৃত্যু হলে তাঁর দেহ হস্তান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র এবং বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে সেই দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নাম, পরিচয়, ঠিকানা যাচাই করে সেই মতো পদক্ষেপ করে দূতাবাস। এই নয় ‘বন্দি’র ক্ষেত্রে ভারত এবং পাকিস্তান হাই কমিশনকে চিঠি দিয়ে লাভ হয়নি বলে দাবি করেছে কারা দফতর। কারা দফতরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জানিয়েছেন, এমনিতে তিন মাসের মধ্যে বিদেশি দূতাবাসের জবাব না এলে বিদেশি বন্দির দেহ শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা হয়। এ ক্ষেত্রে মানবিক কারণে দেহগুলি এখনও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে দুই দেশ ব্যবস্থা না নিলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেষকৃত্যের কাজ করবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement